চীনা বিনিয়োগ কেন্দ্র কিয়াউকফিউর দখল নিতে আসা আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন মিয়ানমারের এক শীর্ষ জান্তা জেনারেল। রাখাইন রাজ্যের কৌশলগত এই বন্দর ঘিরে চলমান সংঘর্ষে জান্তা বাহিনীর একাধিক অবস্থান দখল করেছে বিদ্রোহীরা।
রাখাইনের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, কিয়াউকফিউ-রাম্রি সড়কের পাশে পিয়াইন সি কাই গ্রামসংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। কিয়াউকফিউ শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই এলাকায় জান্তাদের একটি সদর দফতর ঘিরে ফেলেছে আরাকান আর্মি। এছাড়া চীনের তেল ও গ্যাস টার্মিনালের কাছাকাছি লড়াইয়ের খবর মিলেছে।
এর আগে, গত ২৬ মে আরাকান আর্মির স্নাইপার হামলায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কিয়াও মিও আউং ও এক সেনা ক্যাপ্টেন প্রাণ হারান। কিয়াও মিও আউং ১১ নম্বর ডিভিশনের একজন কৌশলবিদ ছিলেন। পরে তার মরদেহ বিশেষ বিমানে ইয়াঙ্গুনে পাঠানো হয়।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৪৫ বছর বয়সী কিয়াও মিও আউং কর্তব্য পালনকালে নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইয়াঙ্গুনের মিংগালাডন সামরিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে, কিয়াউকফিউ শহর রক্ষা করতে স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীকে একযোগে ব্যবহার করছে জান্তা সরকা। তবে পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাখাইনের সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে ইরাবতী জানিয়েছে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে নিযুক্ত চীনা বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ড্রোন হামলায় জান্তা বাহিনীকে সহায়তা করছে। তবে এই তথ্যগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি ইরাবতী।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার একটি আইন প্রণয়ন করে। এতে বলা হয়, চীনা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মিয়ানমারে অস্ত্র বহন করে তাদের বিনিয়োগ রক্ষা করতে পারবে। এর পর থেকে কিয়াউকফিউতে চীনা কর্মীদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
সেখানে চীন একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে, যার মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে সরাসরি প্রবেশাধিকার পাবে বেইজিং। রাখাইনের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো আরও জানিয়েছে, লড়াই শহরের খুব কাছাকাছি চলে আসায় কিয়াউকফিউ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে অনেক জান্তা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, চীনের কৌশলগত তেল ও গ্যাস পাইপলাইন কিয়াউকফিউ থেকে শুরু হয়, যা চীনের ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
২০২৩ সালের নভেম্বরে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে আরাকান আর্মি। এর মধ্যে তারা রাখাইন রাজ্যের ১৭ টাউনশিপের মধ্যে ১৪টি এবং দক্ষিণ চিন রাজ্যের পালেতোয়া অঞ্চল দখলে নিয়েছে। এখন তারা রাজ্যের রাজধানী সিত্তুই দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
জান্তা বাহিনী এর পাল্টা জবাবে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত গ্রাম ও শহরগুলোতে বিমান হামলা চালিয়ে বহু বেসামরিক মানুষ হত্যা করছে। তবে চলতি বছরে রাখাইন ছাড়িয়ে মাগওয়ে, বাগো ও আয়েয়ারওয়াডি অঞ্চলেও নিজেদের প্রভাব বিস্তৃত করেছে আরাকান আর্মি।
সোর্স : বার্মিজ সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী
বিডি প্রতিদিন/কেএ