সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের নামে মিথ্যা অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করা পাইলট রেজাউর রহমানের পরিচয় পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে একের পর এক নারীর সঙ্গে তার প্রতারণা ও লাম্পট্যের ইতিহাস। তার রাজনৈতিক তৎপরতাসহ অতীতের সব কেলেঙ্কারিও জানা গেছে। তিনি বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্ক খ্যাত শফিক রেহমানের জি-৯-এর একজন প্রভাবশালী সদস্য। যেটির তত্ত্বাবধান করেন শফিক রেহমান। তিনি ‘আমার দেশ’ পত্রিকার বহুল বিতর্কিত মাহমুদুর রহমানেরও খুব কাছের লোক। লন্ডনে শফিক রেহমানসহ তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে আসার পর তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হলে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ তাদের পাইলট পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করে। তারপর তিনি বিদেশ গিয়ে আর ফেরেননি। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপি-জামায়াতের সাইবার সিন্ডিকেটে তিনি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তার ফেসবুক প্রোফাইলে ভারতীয় এয়ারলাইনস জেট স্পাইসের ক্যাপ্টেন হিসেবে এখন কর্মরত বলে উল্লেখ করা আছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রেজাউর রহমান ওরফে মানিকের পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল। জিডি পাইলট হিসেবে বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের একটি ফাইটার বিমান নিয়ে তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান। তারপর তিনি সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। সেখানে এক শ্বেতাঙ্গ রমণীকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। সেই ঘরে তার সন্তান রয়েছে। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে বসতি স্থাপন করেন। সেখানে আমেরিকান ফ্লাইং ক্লাব থেকে লাইসেন্স নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে দেশে ফিরে আসেন। তখন বিমানের পাইলট সংকট থাকায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ও মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের তদবিরে বাংলাদেশ বিমানে ক্যাপ্টেন হিসেবে নিয়োগ পান রেজাউর রহমান। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বিমানের এমডি হিসেবে আবদুল মোমেন যোগদান করলে নানা অপকর্ম, দলবাজির রাজনীতিতে দলাদলির কোন্দলে সক্রিয় থাকার অভিযোগে যে কজনকে বরখাস্ত করা হয়, তার একজন হলেন এই বহুল বিতর্কিত ক্যাপ্টেন রেজাউর রহমান। পরে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি এয়ারলাইনসে যোগদান করলেও তারেক রহমান, শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানদের সঙ্গে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ায় তিনি সর্বশেষ রিজেন্ট এয়ারওয়েজ থেকেও বরখাস্ত হন। ঢাকায় ও-টু যে চেইন ডিপার্টমেন্ট স্টোর রয়েছে তার বড় বিনিয়োগকারী রেজাউর রহমান, যেটি তার ভাগ্নেরা পরিচালনা করেন।
তাদের আদি ঠিকানা বিক্রমপুর। তবে কুড়িগ্রামের মোল্লাপাড়ায় তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তার প্রথম স্ত্রী ঢাকার তৎকালীন হোটেল শেরাটনে চাকরি করতেন। সেই ঘরে একটি মেয়ে রয়েছে। দেশে-বিদেশে সব মিলিয়ে পাঁচটি বিয়ে করা ক্যাপ্টেন রেজাউর রহমান সর্বশেষ বিয়ে করেন তার ভাগনি কেয়াকে, যিনি বিমানের এয়ার হোস্টেজ ছিলেন। এই ঘরে তাদের দুই কন্যা রয়েছে। এদের নিয়ে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস করেন। পাইলটের আড়ালে আদম ব্যবসার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। সুইডেন ও আমেরিকায় অনেক আত্মীয়স্বজনকে তিনি যেমন নিয়েছেন, তেমনি এলাকার অনেকের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নেওয়া সত্ত্বেও বিদেশ নিতে না পারার অভিযোগও রয়েছে। চতুর, স্মার্ট ও নারী পটাতে পটু এই লোকটির বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের জন্য কোনো সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সম্প্রতি ভারতের তৃণমূল কংগ্রেসের ফেসবুকে বিজেপির নেতা বলে যে অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছিল, সেটি রেজাউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক, কলামিস্ট ও টকশোর স্পষ্টভাষী পরিচিত মুখ পীর হাবিবুর রহমানের ব্যাংককের মাস্তি বলে নিজের ফেসবুকে ছেড়ে দেন। সেখান থেকেই পীর হাবিবুর রহমানের দুর্নীতিবিরোধী লেখা বক্তব্য এবং বিএনপি-জামায়াতের অভিশপ্ত শাসনামলের কঠোর সমালোচনায় ও লেখায় যারা ক্ষুব্ধ তারা এটিকে লুফে নিয়ে ভাইরাল করেন। এ ছাড়া বিগত ১০ বছর আওয়ামী লীগ শাসনামলের একদল দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক ও শেয়ার লুটেরা, যাদের বিরুদ্ধে পীর হাবিব নিরন্তর বলছেন, লিখছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন, সেসব অপরাধীর একটি অংশও এটি লুফে নেয়। সব অপপ্রচারকারীর বিরুদ্ধে তিনি মামলায় যাচ্ছেন।
সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘যত মিথ্যাচার জঘন্য নোংরামি হোক না কেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমার এ অবস্থান থেকে সরব না।’ এদিকে সেই অশ্লীল ভিডিওর সঙ্গে পীর হাবিবুর রহমানের নাম জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা অপপ্রচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘যারা এর পেছনে রয়েছে তাদের প্রত্যেককে সাইবার ক্রাইম আইনের আওতায় নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।’ ইতিমধ্যে সাইবার ক্রাইম ইউনিট প্রাথমিক তদন্ত শেষ করেছে। ইন্টারনেটে ভিডিওটির মূল উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। এতে সবচেয়ে পুরনো ভিডিওটি তারা পায় ভারতীয় একটি ইউটিউব চ্যানেলে। চলতি অক্টোবরের ২ তারিখ এটি আপলোড করা হয়েছে। সাইবার ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইনসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যে অশ্লীল ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে, তার প্রাথমিক তদন্ত শেষে এর উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিশিষ্ট সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করতে কোনো চক্র এ অপপ্রচার করছে। তবে বিষয়টির নেপথ্যে যারাই থাকুক না কেন, শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে কাজ করছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।’