বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কুৎসিত বক্তব্যের জন্য রাঙ্গাকে সংসদে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুৎসিত বক্তব্যের জন্য রাঙ্গাকে সংসদে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে

স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে বিরোধীদলীয়  চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে গতকাল জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, মসিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্য বাংলার মানুষের হৃদয়ে ব্যথা দিয়েছে। তিনি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যের ঘৃণা প্রকাশ করছি। আজ রাঙ্গার বক্তব্যে সারা দেশে বিক্ষোভ চলছে। জাতির কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন সুস্থ মানুষ হলে, স্বাভাবিক থাকলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন সমালোচনা করতেন না। রাঙ্গা খারাপ বক্তব্য দিয়েছেন। এটা কুৎসিত বক্তৃতা। এ জন্য সংসদে তার দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাওয়া উচিত। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত না থাকলে এমপিও হতে পারতেন না উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, এলায়েন্স থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রাঙ্গা। এলায়েন্স না থাকলে নির্বাচিত হতো কিনা সন্দেহ।  স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দল ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা রাঙ্গার বক্তব্যের নিন্দা জানান। তাকে সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান তারা। আলোচনায় আরও অংশ নেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবুল হক চুন্নু, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজ ভা ারী প্রমুখ। এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের সংসদে উপস্থিত ছিলেন। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে নূর হোসেনকে নিয়ে রাঙ্গার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের বিষয়টি সংসদে তোলেন আওয়ামী লীগের এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী। এ সময় মসিউর রহমান রাঙ্গা অধিবেশনে ছিলেন না। আমির হোসেন আমু বলেন, রাঙ্গা অর্বাচীন চিফ হুইপ। তার বক্তব্য নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। তার বিরুদ্ধে বিধি-ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, এমন দম্ভোক্তি থেকে আগামীতে বিরত থাকবেন। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কোনো সুস্থ, বিবেকবান লোক এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। রাঙ্গার এ ধরনের বক্তব্য রাজনীতি, গণতন্ত্রের জন্য দুঃখজনক; তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। রাঙ্গাকে শুধু ক্ষমা চাইলে হবে না, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও ব্যাখ্যা দিতে হবে। তিনি বলেন, এত বিপ্লবী যদি হতেন তবে মন্ত্রিত্ব থেকে চলে  যেতেন। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এটা রাঙ্গার ব্যক্তিগত বক্তব্য। এটা জাতীয় পার্টির বক্তব্য নয়। জাতীয় পার্টি করি, আমার  নেতা এরশাদ। রাঙ্গা যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে পরিষ্কার করতে চাই, এখানে আমাদের পার্টি চেয়ারম্যান রয়েছেন। তার বক্তব্যটা দলীয়ভাবে স্বীকার করি না। শহীদ নূর হোসেন সম্পর্কে জাতীয় পার্টির কী দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, তৎকালীন চেয়াম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ব্যক্তিগতভাবে নূর হোসেনের বাড়ি গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, ক্ষমা চেয়েছেন, তার পরিবারকে সাহায্য করেছেন। এটা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, রাঙ্গা সাহেব সংসদকে অবমাননা করেছেন। স্বৈরাচারের পতন না হলে রাঙ্গা এমপি হতে পারতেন না। রাঙ্গার গণবিরোধী, সুবিধাবাদী চরিত্রও স্পষ্ট হয়েছে। নজিবুল বশর মাইজভা ারী বলেন, রাঙ্গা শুধু নূর  হোসেনের বিরুদ্ধে নয়; স্বাধীনতা, সংসদ ও গণতন্ত্রের পক্ষের সবার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, সবাইকে অপমান করেছেন। তাকে সংসদে এসে ক্ষমা চাইতে হবে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব থেকে রাঙ্গাকে বহিষ্কারের দাবিও  তোলেন তিনি।

সর্বশেষ খবর