শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পিয়াজ উত্তাপ সংসদে দাবি ক্রসফায়ারের

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিয়াজের দাম অসহনীয় পর্যায়ে বেড়ে যাওয়ায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, বাজারে প্রচুর পিয়াজের জোগান থাকা সত্ত্বেও সরকারের সুনাম নষ্ট করতে অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজির মাধ্যমে পিয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। এজন্য বাজারে অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনে দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ারে দেওয়ার দাবি ওঠে সংসদে। পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে এমপিরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে গতকাল বাদ মাগরিব অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন এমপিরা। আলোচনার সূত্রপাত করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ও বিএনপির হারুনুর রশীদ। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন,  পিয়াজের দাম কেন বাড়ছে, তা আমার বোধগম্য নয়। এতে আমাদের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে বলেছিলেন পিয়াজের ঝাঁজ  বেড়ে গেছে। তিনি অনুরোধ করেছিলেন পিয়াজের রপ্তানি বন্ধ করবেন না। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে পিয়াজ রপ্তানি করেন।  সেজন্য আমি অনুরোধ করব, এখানে (সংসদে) অর্থমন্ত্রী আছেন,  পিয়াজের ব্যাপারে আপনাদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আরও তৎপর হওয়া উচিত। বাণিজ্যমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবস্থা না নিলে অবস্থা খুবই খারাপ হবে।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতির ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর অনেক কর্তব্য। কয়েক দিন আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দেশে আঘাত হানার ফলে পিয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। আজ পত্রিকায় দেখলাম, খুব দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমাকে বলতে হয়, পিয়াজের দাম ২০০ টাকা। এটা কোনো দিন আমরা ভাবিনি। তিনি বলেন, এবার ভারতে পিয়াজ উৎপাদন হয়নি। তবে আমরা সাধারণত আমাদের পণ্যের মজুদের বিষয়ে আগেই মূল্যায়ন করি। বছরে চাহিদা কত, আমাদের আছে কত, আর যেটা শর্ট (কম) সেটা আমরা তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগেই আমদানি করি। টিসিবি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, আমিও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম। এজন্য এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে চাই না। যারা পিয়াজ আমদানি করেন, তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিন। আমাদের যখন কোনো একটি পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তখন আমরা ডিউটি কমিয়ে দেই। এই মুহূর্তে পিয়াজ আমদানির জন্য ডিউটি ফ্রি করে দিন। কারণ আমি যখন ৯৬ পর্যন্ত শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ছিলাম, তখন কয়েক ঘণ্টার জন্য লবণের দাম  বেড়েছিল। সে সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। তাকে আমি অনুরোধ করার পরই তিনি ডিউটি শূন্য করে দিয়েছিলেন। এই নিউজটা পরিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রভাব পড়ে বাজারে। তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে সেদিন সংসদে শিল্পমন্ত্রী বললেন, পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অথচ তখন বাজারে পিয়াজের দাম ছিল ১০০ টাকা। তার দুই দিন পরই বাজারে পিয়াজের দাম হয়ে গেল ২০০ টাকা। ওনার এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি। ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছেন।

এ বিষয়ে সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, বাজারে কিন্তু  পিয়াজ রয়েছে। এর দাম এত হওয়ার কোনো কারণ নাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ জানিয়েছিলেন পিয়াজ একটু কম ব্যবহার করার।  সেটা অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু গতকাল পিয়াজের দাম ছিল দেড়শ টাকা, আজকে তা হয়ে গেছে ২০০ টাকা। এটা সরকারের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র, সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে লিপ্ত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। এই সময়ে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীরা এই কাজগুলো করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই আমরা সংসদ থেকে আহ্বান জানাব। মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে- এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। এজন্য এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন, অর্থমন্ত্রী আছেন নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে একটি পদক্ষেপ নেবেন। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবেন পিয়াজের দাম  যেন অচিরেই কমে আসে।

জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী বলেছিলেন পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ কথা বলার পর দিনই পিয়াজের দাম হয়ে গেল দেড়শ টাকা। আবার আজকে পিয়াজের দাম ২০০ টাকা। পাশাপাশি আমি গুগলে সার্চ দিয়ে  দেখলাম- ভারতের কৃষক কাঁদছেন। কারণ পিয়াজের মূল্য ৮ টাকা কেজি। আমার প্রশ্ন হলো- প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তো ভালো সম্পর্ক। সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়ই আমরা বা প্রধানমন্ত্রী যদি ব্যক্তিগতভাবে পদক্ষেপ নিতেন তাহলে পিয়াজের ক্রাইসিস থাকত না। আরেকটি বিষয় হলো, পিয়াজ বাজারে নেই- এরকম তো না। আমরা  দোকানে গিয়ে, মার্কেটে গিয়ে প্রচুর পিয়াজ দেখতে পাই। এজন্য একটা অভিযান চালানো উচিত। কারণ আমার মনে হয় এটা একটা কনস্পিরেসি।

সরকারের বদনাম করার এটা একটা পথ। এজন্য আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলব, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন। তিনি আরও বলেন, পাঁচটা ভালো কাজ নষ্ট হয়ে যায় একটা খারাপ কাজের জন্য। আমাদের সরকার ফেনসিডিল ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য অভিযান চালায়। বন্দুকযুদ্ধে তারা মরে যায়। এভাবে পিয়াজের মূল্য বৃদ্ধি যারা করল তাদেরও দু-একজন মরে যাক। এরকম হলে একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ছোটকালে আমরা যে রকম বিস্কুট দৌড় খেলতাম সেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন  পিয়াজ নিয়ে রসিকতা চলছে। আশা করি সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সর্বশেষ খবর