মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কথা হলফনামা দিয়ে স্বীকার ওয়াসার এমডির

নিজস্ব প্রতিবেদক

কেলেঙ্কারি যেন পিছু ছাড়ছে না ঢাকা ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খানের। একের পর এক মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেই চলেছেন তিনি। এবার বুড়িগঙ্গায় ঢাকা ওয়াসার সুয়ারেজ লাইন নিয়ে খোদ হাই কোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন ওয়াসা এমডি। অবশেষে হলফনামা দিয়ে অসত্য তথ্য দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়েছেন। তবে তার সেই ক্ষমার আবেদনে আপাতত সায় দেয়নি আদালত। হাই কোর্ট বলেছে, ওই সব পয়োনিষ্কাশন লাইন বন্ধে ওয়াসার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ভিত্তিতে আবেদনটি বিবেচনা করা হবে। গত ১৮ জুন ঢাকা ওয়াসার দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বুড়িগঙ্গায় ওয়াসার কোনো সুয়ারেজ লাইন নেই। কিন্তু এরপর বিআইডব্লিউটিএর দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন এলাকায় ৬৮টি স্থান দিয়ে দূষিত বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫৬টি ওয়াসার সুয়ারেজ লাইন। দুই প্রতিবেদন দেখার পর ১৭ নভেম্বর ঢাকা ওয়াসার এমডিকে শোকজ করে হাই কোর্ট। শোকজ নোটিসে আদালতের আদেশ অমান্য করা এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। এ অবস্থায় ঢাকা ওয়াসার এমডির একটি জবাব ২ ডিসেম্বর দাখিল করা হয় হাই কোর্টে। ওয়াসা এমডির ওই হলফনামায় বলা হয়, বুড়িগঙ্গায় ৬৭টি স্থান দিয়ে বর্জ্য পড়ছে। তার মধ্যে ওয়াসার লাইন ১৬টি। ঢাকা ওয়াসার এই দুই ধরনের প্রতিবেদনে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাই কোর্ট। এ অবস্থায় ওয়াসা ওই দিন তাদের আগের প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে নেয় এবং গত রবিবার নতুন করে জবাব দাখিল করে। এই জবাবে ১৮ জুনের প্রতিবেদনের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া হয়। বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে গত রবিবার ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয়। আদালতে আবেদনকারী মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূইয়া ও রিপন বাড়ৈ। পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আমাতুল করীম। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী উম্মে সালমা। শুনানিকালে ওয়াসার আইনজীবী বলেন, ঢাকা ওয়াসাও চায় বুড়িগঙ্গার পানি পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত রাখতে। ওই সময় আদালত বলে, বুড়িগঙ্গার পানি পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত রাখতে ওয়াসার যদি ইচ্ছাই থাকত তাহলে এভাবে সুয়ারেজ লাইন রাখা হতো না। আর বুড়িগঙ্গার পরিবর্তে পদ্মা ও মেঘনার পানি এনে ঢাকায় সরবরাহ করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করতে হতো না। আসলে যত প্রকল্প, ততই টাকা উড়ে যাওয়ার সুযোগ, এ কারণে হয়তো এমনটি করা হয়।

এরপর বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়া ঢাকা ওয়াসার সব সুয়ারেজ লাইন সরাতে সংস্থাটিকে ছয় মাস সময় দিয়েছে হাই কোর্ট। আইনজীবীর মাধ্যমে করা নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদনের বিষয়ে হাই কোর্ট বলেছে, ওই সব পয়োনিষ্কাশন লাইন বন্ধে ওয়াসার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ভিত্তিতে নিঃশর্ত ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এই আদেশ বাস্তবায়নে এক মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওয়াসাকে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া বুড়িগঙ্গার দুই তীরে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় পড়ছে সেসব প্রতিষ্ঠান আগামী এক মাসের মধ্যে বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা দাখিল করতেও সংস্থাটিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী ৮ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছে হাই কোর্ট।

আগেও বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন ওয়াসা এমডি : এর আগে গত এপ্রিলে ‘ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় ও বিশুদ্ধ’ দাবি করে বিতর্কের সৃষ্টি করেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ওই সময় তার দেওয়া মিথ্যা তথ্য প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন রাজধানীর বাসিন্দারা। লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করেছিলেন সাধারণ মানুষ। এমনকি ওয়াসা এমডিকে তার সংস্থার সরবরাহ করা পানি দিয়েই শরবত খাওয়াতে গিয়েছিল জুরাইন এলাকার জনগণ। এরপর হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিও তাদের প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, ওয়াসা এমডির তথ্য সত্য নয়। বরং ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে ব্যাকটেরিয়া ও মলের জীবাণু পাওয়ার কথা জানানো হয় তাদের প্রতিবেদনে।

সর্বশেষ খবর