করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি দৈনিক সময়ের আলোর প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। পরে গতকাল সকালে স্বল্পসংখ্যক লোকের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে তাকে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার রাজা চাপিতলা গ্রামের ঈদগাসংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে পিতার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৯ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হুমায়ুন কবির খোকনই প্রথম সাংবাদিক, যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে রেখে গেছেন। রিজেন্ট হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তারিখ শিবলী জানিয়েছেন- মঙ্গলবার রাতে তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মারা যান হুমায়ুন কবির খোকন। তার মৃত্যুর আগে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর খোকনের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে হোম আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। ঢাকায় বৃহত্তর কুমিল্লা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হুমায়ুন কবির খোকন দৈনিক সময়ের আলোর আগে মানবজমিন ও আমাদের সময়সহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। খোকনের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর। রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকন করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। আমরা তাকে সন্দেহজনক কভিড-১৯ রোগী হিসেবেই যথাযথ নিয়মে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তার স্যাম্পল পাঠানোর পর বুধবার ভোরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) মৌখিকভাবে আমাদের জানিয়েছে তার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে হুমায়ুন কবির খোকনকে যখন আমাদের হাসপাতালে আনা হয় তখনই তার অবস্থা ক্লিনিক্যালি সাউন্ড ছিল না। যতটুকু শুনেছি, এখানে আসার আগে তাকে আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু করোনা সন্দেহে হাসপাতালগুলো ভর্তি করেনি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সময়ের আলো পত্রিকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন খোকনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়াসহ সার্বিকভাবে পাশে দাঁড়াবে। খোকনের সহকর্মীরা জানান, গত ১৫ দিন ধরে বাসা থেকেই অফিস করছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে তার শ্বাসকষ্ট ও মাথাব্যথা দেখা দেয়। এরপর শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত ৯টার দিকে তাকে রিজেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়।
খোকনের মৃত্যুতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের শোক প্রকাশ : সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রমুখ। সাংবাদিক সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ডিপ্লোম্যাটিক করসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দ সচিবালয় রিপোর্টার্স ফোরাম, ঢাকাস্থ বৃহত্তর কুমিল্লা সাংবাদিক সমিতি, রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি-ঢাকা নেতৃবৃন্দ খোকনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তারা খোকনের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।