রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
পুলিশের সংবাদ সম্মেলন

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওয়াজ নিয়ন্ত্রণ করত হেফাজত

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন’-এর মাধ্যমে দেশের ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণ করত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন’ ঠিক করত কে কোথায় ওয়াজ করবেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে সরকারবিরোধী বক্তব্যগুলো পরিকল্পনা মাফিক সাধারণ মুসলমানদের কাছে তুলে ধরতেন তারা। গতকাল নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম।

তিনি বলেন, নাশকতার অভিযোগে ঢাকাসহ সারা দেশে বেশ কিছু মামলা রুজু হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, নাশকতার ঘটনায় ৫৩টি মামলা দায়ের হয়। ৬৪টি মামলা তদন্তাধীন। এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের ১৪ কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। তারা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে রয়েছেন। ডিবি পুলিশের এই যুগ্ম কমিশনার বলেন, যেহেতু রজমান মাস, সংযমের মাস। তিনটি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। যাদের কোরআন-হাদিসের জ্ঞান আছে, তাদের টিমে রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। আমরা স¤প্রতি ও ২০১৩ সালে দায়ের করা মামলা তদন্ত করছি। এর অধিকাংশই নাশকতার মামলা। নাশকতা ঘটনাগুলোর উদ্দেশ্য কী, কারা করছে, কেন করছে সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি। মূলত ২০১৩ সালে সরকার পতনের লক্ষ্যে একটি চক্রান্ত হয়। সেই চক্রান্তের মধ্যে জড়িত ছিল রাজনৈতিক দল নেতা। নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল সরকার পতনের। সেখানে হেফাজতকে কাজে লাগিয়ে সরকার পতনের অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। মাহবুব আলম আরও বলেন, চলতি বছর নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে যে নাশকতা হলো সেখানেও একই ধরনের সরকার পতনের কৌশল নেওয়া হয়েছিল। সেটি এখন পরিষ্কার। নেতারা হেফাজতকে অরাজনৈতিক বললেও সব নেতাই কোনো না কোনো দলের নেতা। তাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা এজেন্ডা আছে। হেফাজতকে অরাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে তারা সেই দলীয় এজেন্ডাগুলো আদায় বা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। হেফাজতে ইসলাম এমন একটি সংগঠন যার ডাকে সব মাদরাসা ছাত্রকে ডাকা যায়, সাড়া দেয়। এই সুযোগ নিয়েই হেফাজতকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। ২০১৩ সালে ১৬৪ ধারায় বাবুনগরী জবানবন্দি দিয়েছিলেন। স¤প্রতি মুফতি ফখরুলের জবানবন্দিতে সেই ধরনের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। সেখানে কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। হেফাজতের অরাজনৈতিক চরিত্র আর নেই। হেফাজত এখন অনেকের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অপচেষ্টা করছে, নাশকতা করছে। হেফাজতের অর্থের জোগানদাতা কারা, এ বিষয়ে মাহবুব আলম বলেন, ‘তারা বলেছেন বাইরে থেকেই বেশির ভাগ অর্থ আসে। রাজনৈতিক দল থেকে এ সময় কোনো ফান্ড নেওয়া হয়েছে কি না, এ ধরনের কোনো বিষয় এখনো পাওয়া যায়নি।’ সাম্প্রতিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাইরে থেকে অর্থ এসেছে কি না, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখনো নিশ্চিত নই। অভিযান অব্যাহত থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত নাশকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং ইন্ধনদাতারা গ্রেফতার না হচ্ছে।’ যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, মাদরাসা ছাত্রের এতিম অসহায় ছাত্রদের দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ বাড়ি গাড়ি করেছে হেফাজত নেতারা। মাদরাসা দখলের মতো অপকর্ম ও অনেকের নারী বিলাসের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। হেফাজত নেতা মামুনুল হকের গোপন বিয়ের বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে বলে জানান মাহবুব আলম। তিনি বলেন, প্রথম বিয়ে শরিয়ত বা আইনসম্মতভাবে হয়েছে। পরবর্তী যে দুটি বিয়ের কথা তিনি স্বীকার করেছেন, এ দুটি চুক্তিভিত্তিক বিয়ে। সেখানে কোনো কাবিননামা নেই। পরের বিয়ের চুক্তিগুলো হচ্ছে- স্ত্রী থাকবে কিন্তু স্ত্রীর কোনো মর্যাদা পাবে না। স্ত্রী মেলামেশা করতে পারবে কিন্তু সম্পর্কের কোনো অধিকার পাবে না। কোনো দাবিদাওয়া বা সন্তান ধারণ করতেও পারবে না। যদিও এ ধরনের চুক্তি প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।

সর্বশেষ খবর