মঙ্গলবার, ১৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মিতু হত্যায় স্বীকারোক্তি দেননি কারাগারে বাবুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার রিমান্ডের পুরোটা সময় ছিলেন নিরুত্তর। তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তাদের প্রশ্নের উত্তর না নিয়ে উল্টো তাদের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। রিমান্ড শেষে গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি না হওয়ায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রডিকিউশন) কাজী সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করা হয়। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে বলা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তদন্তকারী সংস্থাও কোনো রিমান্ড আবেদন করেনি। তাই আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।’

আদালতসূত্রে জানা যায়, পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বাবুল আক্তারকে পিবিআই কর্মকর্তারা আদালতে সোপর্দ করে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। আদালত বাবুল আক্তারকে তিন ঘণ্টা সময় দেয় চিন্তাভাবনার জন্য। এ সময় চুপচাপ বসে ছিলেন তিনি। জবানবন্দি দিতে রাজি না হওয়ায় আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। বিচারকের খাসকামরা থেকে বের হওয়ার সময় বাবুলকে বিমর্ষ দেখা যায়। এ সময় তিনি কিছু বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ বেষ্টনীতে থাকায় তা বলতে পারেননি। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে তাকে কারাগারে নেওয়া হয়। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানান, স্ত্রী হত্যার অভিযোগে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার প্রথম তিন দিনই এক প্রকার নিরুত্তর ছিলেন। উল্টো ‘নার্ভ শক্ত, আমাকে ভাঙতে পারবেন না’ এ ধরনের কথা বলে তদন্তসংশ্লিষ্টদের চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করেন। নিজের দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও বিচলিত ছিলেন। মাঝেমধ্যে কেঁদেছেনও। কিন্তু মিতুর খুন নিয়ে করা প্রায় সব প্রশ্নই এড়িয়ে গেছেন। প্রশ্ন করলেই বলতেন, ‘আপনারা তো সবই জানেন। আমি কী বলব।’ মুছার বিষয়ে শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে তার সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন।

কারাগারে বাড়তি নিরাপত্তা পাবেন বাবুল : স্ত্রী হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার সাধারণ বন্দীর মতোই থাকবেন। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে তাকে নেওয়া হবে সাধারণ ওয়ার্ডে। কিন্তু কারাবন্দীদের কয়েকজন বাবুল আক্তারের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন অতীতে। বিষয়টি চিন্তা করে তাকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে কারাগারে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মোহাম্মদ তারিক ইসলাম বলেন, ‘গতকাল বিকালে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। নিয়ম অনুযায়ী তাকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ডে রাখা হবে। পরে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হবে। তবে তিনি পুলিশে দায়িত্ব পালনকালে অনেক অপরাধীকে গ্রেফতার করেছেন। বিষয়টি চিন্তা করে তাকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন মহানগরের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে খুন হন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পাঁচ বছর পর পিবিআইর তদন্তে এ খুনে বাবুল আক্তারের সংশ্লিষ্টতার পাওয়া যায়। পরে পুরনো মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে নতুন করে মামলা হয়। যাতে আসামি করা হয় বাবুল আক্তারকে।

সর্বশেষ খবর