শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জে মামুনুলকান্ড

মামলার প্রধান আসামির কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নারীসহ অবরুদ্ধ করাকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও মহাসড়কে নাশকতার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি ও খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা ইকবাল হোসেন (৫২)-এর কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকাল ৩টায় তিনি হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা কেরানীগঞ্জ কারাগারের জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ। নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মাহবুবুল আলম জানান, ইকবাল গত ১১ মে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। পরে ডাক্তারদের নির্দেশনা মোতাবেক তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছিল। প্রয়াত মাওলানা ইকবাল হোসেনের স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। তিনি সোনারগাঁ উপজেলা হেফাজতে ইসলামের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তার পিতার নাম আবু সাঈদ। প্রয়াতের বড় মেয়ে মাহবুবা জানান, দুপুর ৩টায় তার বাবা মারা গেছেন। তাকে বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সকালে জানানো হয়েছে তিনি খুব অসুস্থ। হাসপাতালে গিয়ে আমরা দেখি তিনি ইতিমধ্যে আইসিইউ সাপোর্টে রয়েছেন। তাকে ৩টায় মৃত ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য যে, গত ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে উপজেলার মোগরাপাড়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ, ওই রিসোর্ট ও আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেসবুক লাইভে এনে নির্যাতনের মুখে মামুনুল হকের কাছে ক্ষমা চাওয়াতে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটে। ওই সময় সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মসজিদের ইমাম ও খেলাফতে মজলিশ সোনারগাঁ উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ইকবাল হোসেন মাগরিবের নামাজের পর মসজিদের মাইকে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করে লোক জমায়েত করে এবং উক্ত হামলার নেতৃত্ব দেন। এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ৬টি মামলা দায়ের করা হয়। গত ১১ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শ্যামপুর থানাধীন জুরাইন রেলগেট বাজার মসজিদের সামনের ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে থেকে চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১ এর একটি টিম। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, খেলাফতে মজলিশ সোনারগাঁ উপজেলা শাখার সভাপতি ও হেফাজতের নেতা ইকবাল হোসেন ওরফে মাওলানা মো. ইকবাল হোসেন (৫২), হেফাজতে ইসলাম সোনারগাঁ উপজেলা শাখার আমির হাফেজ মাওলানা মহিউদ্দিন খান (৫৩), হেফাজতে ইসলাম সোনারগাঁ উপজেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা মো. শাহজাহান খান ওরফে শিবলী (৪৩) এবং হেফাজতে ইসলাম সোনারগাঁ উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি হাফেজ মোয়াজ্জেম হোসেন (৫২)। পরে ১২ এপ্রিল মাওলানা ইকবাল হোসেনসহ চারজনকে সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহম্মেদ হুমায়ুন কবিরের আদালতে পাঠালে আদালত প্রত্যেককে এক মামলায় দুই দিন ও আরেক মামলায় এক দিনসহ মোট তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। গত ২২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে সোনারগাঁ উপজেলার রয়েল রিসোর্টে হেফাজত নেতা মামুনুল হক কান্ডকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও মহাসড়কে নাশকতা মামলার প্রধান আসামি ও খেলাফত মজলিশের সভাপতি ইকবাল হোসেন নিজের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর