বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

হুইপ সামশুল ও ছেলে শারুনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

হুইপ সামশুল ও ছেলে শারুনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল চট্টগ্রাম

হুইপ সামশুল ও তার ছেলে শারুনের গ্রেফতার দাবিতে গতকাল চট্টগ্রামে বিক্ষোভ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিতর্কিত হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, তার ছেলে নাজমুল হক চৌধুরী শারুন ও ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাবের বিরুদ্ধে গতকাল মাঠে নেমেছেন চট্টগ্রামের মানুষ। বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে অংশ নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সর্বস্তরের মানুষ। তারা জুতা দেখিয়ে ঘোষণা করেন, হুইপ ও তার ছেলেকে চট্টগ্রামে প্রতিহত করা হবে। বিক্ষুব্ধরা সামশুলকে হুইপ ও সংসদ সদস্য পদ থেকে হটিয়ে কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি তোলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে গতকাল চট্টগ্রাম মহানগরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এসব দাবি করা হয়।

পরিষদের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবু তৈয়ব বলেন, হুইপ সামশুল হক, তার ছেলে শারুন এবং তাদের পরিবার লুটপাটের প্রতিবাদ করায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দীন আহমদকে লাঞ্ছিত করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অবমাননার অর্থই হচ্ছে পুরো জাতিকে অপমান করা। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিপীড়নকারীর কাছে কখনো দেশ নিরাপদ নয়। জাতীয় পতাকা নিরাপদ নয়। কাজী তৈয়ব বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সংসদ থেকে মুক্তিযোদ্ধার অবমাননাকারীর বহিষ্কার দাবি করেন। কয়েকবার হুইপ পরিবারের রোষানলের শিকার হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন আহমদ সমাবেশে বলেন, পটিয়ায় হুইপ, তার ছেলে শারুন ও ভাই নবাবের ত্রাসের রাজত্ব চলছে। পটিয়ার সব প্রকল্প থেকে তারা ২০ শতাংশ হারে কমিশন নেয়। কেউ সেখানে মাথা তুলে কথা বলতে পারে না। একসময় বিএনপি ও জাতীয় পার্টি করা ব্যক্তি এখন আওয়ামী লীগের বড় নেতা! কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, অপমান করে। শামসুদ্দিন আহমদ হুইপ সামশুলের এমপি পদ বাতিল এবং তার ছেলে ও ভাইকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, তাদের চট্টগ্রামে প্রতিহত করবেন মুক্তিযোদ্ধারা। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকাল ৩টার আগেই অবস্থান নিতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধাসহ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা। এ সময় পুলিশ বাধা দেয় তাদের। পুলিশের বাধায় জড়ো হতে না পেরে চেরাগী পাহাড় এলাকায় অবস্থান নেন। সবাই জড়ো হয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অভিমুখে মিছিলসহকারে রওনা হলে ফের পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। পরে মিছিল ঘুরিয়ে ডিসি হিল, লাভ লেন, কাজীর দেউরী, আলমাস এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জহুর আহমেদ চৌধুরীর বাসভবন হয়ে ওয়াসা মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। অংশগ্রহণকারী সবাই হুইপ, তার ছেলে ও পরিবারের অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে জুতা প্রদর্শন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন আহমদকে ‘লুঙ্গি খুলে পেটানোর’ হুমকি প্রদান করায় সামশুলকে এমপি ও আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। একই সঙ্গে বাপ-ছেলেকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর কাছে ‘জাতীয় পতাকা নিরাপদ নয়, বাপ করেছে মেশিন চুরি পোলা সুদখোর সংসদটা পবিত্র কর আনো নতুন ভোর, জিয়ার বিচ্ছু এরশাদের সাপ্লাই সারা দেশে ইয়াবার টাকা বাপ-বেটায় খায়’সহ মুহুর্মুহু নানান স্লোগানে দেওয়া হয়। মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবু তৈয়ব ও মহাসচিব মরহুম জননেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর ছেলে জসিম উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী মাহবুবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ আজিজের সন্তান ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুদ্দীন খালেদ বাহার, সাবেক ছাত্রনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নওশাদ মাহমুদ চৌধুরী রানা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ’-এর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শওগত আনোয়ার খান, মহাসচিব উত্তম কুমার বড়ুয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আলম, অর্থ সম্পাদক সওকত মাসুম, দফতর সম্পাদক মো. মনজু, মো. নাসির খান, উজ্জ্বল চৌধুরী, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি নওশাদ সেলিম, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, সহসভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে চৈতী বসু, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্তের সন্তান সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম রসুল নিশান ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বেলাল উদ্দিন, মহানগরের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন দুলাল, ছয় দফা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক ছয় টুকরো করা সাবেক চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দানেশচন্দ্র দেবনাথের ছোট ভাই বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পরেশচন্দ্র দেবনাথ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক দিদার প্রধান, মো. ফয়সাল ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গ চট্টগ্রাম মহানগর ও থানা কমিটির নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে মো. ওসমান গনি, গাজী শোহেন, বাবলু মিয়া, মো. আবাস, আমিনুল, মো. গোলাম নবী, মো. ওসমান গনি, মো. হাবিবুর রহমান, পিমলু, নাঈম উদদীন, আবু তাহের রিপন, জয়নাল আবেদীন, মো. বাহার প্রমুখ।

মেজবান ও টাকা দিয়ে লোক সংগ্রহ! : মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানের প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা সম্মান সংরক্ষণ পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল প- করতে লোক ভাড়া করার অভিযোগ উঠেছে হুইপ ও এমপি সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, সমাবেশে আসার আগে পটিয়ার একটি কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের আয়োজনও করা হয়। দেওয়া হয় বিকালের নাশতাও। গতকাল হুইপ আয়োজিত কথিত এ সমাবেশে শিশু-কিশোরদেরও জড়ো করার অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ ঠেকাতে নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে শিশু-কিশোরদের জড়ো করেন হুইপ ও তার ছেলে। তাদের আসা-যাওয়ার জন্য গাড়ি, দুপুরের খাবার এবং বিকালের নাশতার ব্যবস্থাও করা হয়। জনপ্রতি দেওয়া হয় নগদ ১ হাজার টাকা। সভায় অংশগ্রহণকারী স্কুল শিক্ষার্থীদের সামশুল নামসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কিশোর বলে, ‘পটিয়া ইন্দ্রপোল এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করানো হয়। সেখান থেকে বাসে করে আমাদের শহরে নিয়ে এসেছে। আমাদের স্কুল বন্ধ, তাই সমাবেশের নাম করে শহর দেখতে এলাম। এক বড় ভাইয়ের কথায় আমি সভায় এসেছি।’ এ কিশোর আরও বলে, ‘দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান আমাদের সমাবেশে এনেছেন। তিনি প্রতিজনকে ১ হাজার টাকা করে দেবেন। না হলে সমাবেশে কী জন্য আসব? হুইপ আমার মা-বাপ লাগে নাকি?’

হুইপের মুক্তিযোদ্ধাবিরোধী মানববন্ধন : হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরী ও ভাই নবাব চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন আহমদকে হুমকির প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধন ঠেকাতে পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা থেকে অন্তত ৬০-৭০টি বাস করে মানুষ জমায়েত করেন। এতে মহানগরের অনেক সড়কে যানজট তৈরি হয়। উপজেলার বাসে ভরপুর হয়ে যায় মহানগরের বিভিন্ন এলাকার সড়ক। দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার মানুষ, পথচারী, নারী ও শিশু। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

সর্বশেষ খবর