শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

রোগী বাড়ছে পাবনা মানসিক হাসপাতালে

এস এ আসাদ, পাবনা

দেশের বিশেষায়িত সরকারি মানসিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগী বেড়েই চলেছে। জনবল সংকটে রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। মানসিক রোগী বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের নিবন্ধন তথ্যমতে, ৫০০ শয্যার পাবনা মানসিক হাসপাতালে ২০১৯ সালে শুধু বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫১ হাজার ৩৪১। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৭১ জনে। চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে করোনাকালে দেশে আন্তজেলা যান চলাচল বন্ধ থাকলেও ২৮ হাজার ৮০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়াও ইনডোরে ভর্তি হয়েছেন ২৪৮ জন। এটি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। মানসিক রোগী ভর্তির এই ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে রোগীর সংখ্যা গত দুই বছরের তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে।

এ পরিসংখ্যানে বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সুস্থ হওয়া অনেক রোগীই বারবার ফিরছেন হাসপাতালে। এদের মধ্যে অনেকেই ৩ থেকে ১০ বার পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার নজির রয়েছে বলে জানান হাসপাতালের পরিসংখ্যান শাখার কর্মকর্তারা।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিসংখ্যান শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে গত ১০ বছরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ লাখেরও বেশি রোগী, যার মধ্যে পুরুষ ও মহিলা রোগী প্রায় সমান। বারবার রোগী ফিরে আসার কারণ সম্পর্কে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবদুল বারী বলেন, সম্পূর্ণ ভালো হওয়া বলা যাবে না, যখন একটু সুস্থ হয় রোগীদের তখনই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে যাওয়ার পর তারা হয়তো ঠিকমতো ওষুধ ও খাবার খায় না। ফলে ওইসব রোগী কিছুদিন পর আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পাবনা মানসিক হাসপাতালে ৩১ জন চিকিৎসক পদের মধ্যে ১৮ জনের পদই শূন্য। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), অ্যানেসথেটিস্ট, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট, বায়োক্যামিস্ট, ডেন্টাল সার্জনের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে এই হাসপাতাল। সীমিত চিকিৎসক ও জনবল দিয়েই যথাসম্ভব সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। হাসপাতালটির জন্য ৩১ চিকিৎসকসহ মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৬৪৩। বর্তমানে ১৩ চিকিৎসকসহ কর্মরত আছেন ৪৫৩ জন এবং শূন্য রয়েছে ১৯০টি পদ। জনবলের অভাবে এখন ধুঁকছে হাসপাতালটি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, মানসিক রোগী যেভাবে বাড়ছে জরুরি ভিত্তিতে সিনিয়র কনসালটেন্ট, ক্লিনিক্যাল সাইক্রিয়াটিস্ট, মেডিকেল অফিসার নিয়োগ করা না হলে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। চিকিৎসকরা জানান, পুরোনো রোগীরাই ঘুরে ফিরে আবার ভর্তি হচ্ছে এই হাসপাতালে। এর কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর সেখানে পরিবার থেকে প্রয়োজনীয় যত্ন ও ভালোবাসা না পাওয়া, নিয়মিত খাবার ও ওষুধ না খাওয়ার জন্যেই এমনটি হচ্ছে। ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউসে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে শহরের অদূরে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটি। পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় শয্যা সংখ্যা কম। তারপর চিকিৎসক ও লোকবল সংকট তো রয়েছেই। অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসার সঙ্গে এই হাসপাতলের তুলনা করা যাবে না। অন্য হাসপাতালের রোগীরা বাইরের খাবার খেতে পারে, এখানে তা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয় খাওয়া-দাওয়া, চুল, হাত-পায়ের নখ কাটা থেকে শুরু করে রোগীর সব কাজই আমাদের করতে হয়। লোকবল সংকট নিয়ে আমরা খুবই বিপাকে রয়েছি। তিনি বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এই হাসপাতালে উন্নত সেবা প্রদানের চেষ্টা থাকে। তবে রোগীর চাপে আমরা কিছুটা অসহায়। বহির্বিভাগে প্রতি মাসে রোগীদের যে সেবা দেওয়া হচ্ছে তা পাঁচ বছর আগেও ছিল প্রায় অর্ধেক।

কেন মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লোক সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে রোগীও বাড়ছে। পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন অবক্ষয়জনিত কারণে অবসাদ, বিভিন্ন ডিভাইস আসক্তি, দুশ্চিন্তাসহ বিভিন্ন কারণে রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান এই চিকিৎসক। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিন রোগী ভর্তি করাতে অনেক উচ্চপর্যায়ের তদবির আসে। সবাইকে আমরা ভর্তি করাতে পারছি না। অনেক রোগী ফেরত পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে। যেভাবে রোগী বাড়ছে তাতে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক রোগীর জন্য একটি করে ইউনিট খোলা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর