ঈদের পর শুরু হওয়া ‘কঠোরতম লকডাউনের’ তৃতীয় দিনে গতকাল পুরো ঢাকাতে মানুষ ও যানবাহন চলাচল বেড়েছে। তবে অধিকাংশই প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও পণ্যবাহী পিকআপ। অনেকেই হেঁটে রাজধানীতে প্রবেশ করছেন। এদিকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুট দিয়ে সরকারি-বিধিনিষেধ আর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে যাত্রীরা ফেরিতে পদ্মা পার হচ্ছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা; রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে থেকে যানবাহনের জটলা শুরু হয়ে ঠেকেছে শ্যামলী মানসিক হাসপাতালের প্রবেশ মুখ পর্যন্ত। হাসপাতালের সামনের রাস্তায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে জিজ্ঞাসাবাদ চলায় এমন পরিস্থিতি। এই চৌকিতে তিতুমীর নামের ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, যতটা সম্ভব তল্লাশি করছি। অধিকাংশই ব্যাংক ও হাসপাতালগামী যাত্রী। গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সবার কাগজপত্র দেখা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু এই সড়কই নয়, ঢাকার অনেক রাস্তায় গতকাল লোকের চলাচল বেশি ছিল। গণপরিবহন না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় রিকশায় করে গন্তব্যে ছুটছেন অনেকে। বিভিন্ন মোড়ে ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও চালকের মধ্যে বিতন্ডার দৃশ্য দেখা গেছে।
সকালে কয়েক দফায় বৃষ্টি হওয়ায় কিছু কিছু এলাকায় তল্লাশি কাজে ছেদ পড়েছে। পুলিশ সদস্যরা ব্যারিকেড ছেড়ে দিয়ে রাস্তার পাশে গাছের নিচে আশ্রয় নেন। এমনই পরিস্থিতি দেখা গেছে বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট ও আসাদ গেট এলাকায়।গাবতলী থেকে বনানীর গন্তব্যে ২০০ টাকা ভাড়ায় মহাখালী এসে রিকশা চালকের সঙ্গে বিতন্ডায় জড়াতে দেখা যায় পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে। পায়ের ব্যথার কারণে আর যেতে চাচ্ছিলেন না রিকশাচালক। বৃষ্টির মধ্যে বাকি পথ হেঁটে যেতে চাচ্ছেন যাত্রীও। তবে মিনিট দশেক বিতন্ডার পর বৃষ্টি থামলে তারাও চলতে শুরু করেন। মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে উত্তরা, আবদুল্লাহপুরগামী বহু যাত্রীকে অপেক্ষায় দেখা যায়। তাদের অধিকাংশই এসেছেন কোনো না কোনো হাসপাতালে।
মিরপুর ষাট ফিট সড়কে বসা তল্লাশি চৌকিতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানান, মানুষজন বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে রাস্তায় নামছে। তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। তবে সকাল থেকে কিছু গাড়ির কাগজপত্রে ঝামেলা থাকায় মামলা করা হয়েছে।
ঢাকামুখীদের ফেরিতে গাদাগাদি, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত : শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ রুট দিয়ে সরকারি বিধিনিষেধ আর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে যাত্রীরা ফেরিতে পদ্মা পার হচ্ছেন। বিআইডব্লিউটিসির এ জি এম সফিকুল ইসলাম জানান, রবিবার সকাল থেকে এ নৌরুটে সচল ৫টি ফেরিতে লোকজন গাদাগাদি করে পার হচ্ছেন। কেউই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। এদিকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে রাজধানী ফেরা অসংখ্য যাত্রীর ভিড় দেখা গেছে। এ সময় ‘ফেরি কদম’ ঘাটে ভিড়তেই হুড়মুড় নামতে শুরু করে লোকজন।
তবে লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঘাটে আসার পর বিপাকে পড়তে হচ্ছে ঢাকামুখোদের।
ফেরি কদমের কোয়ার্টার মাস্টার মো. আক্তারুজ্জামান জানান, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছেন অনেকে। এতে অতিরিক্ত ভাড়াও গুনতে হচ্ছে তাদের। অনেকে আবার পায়ে হেঁটেই রওনা হয়েছেন।
বরিশাল : কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিন বরিশালের রাস্তাঘাটে চলাচল করেছে প্রচুর মানুষ এবং যানবাহন। তবে বন্ধ ছিল নগরীর বেশিরভাগ দোকানপাট। এদিকে লকডাউন এবং স্বাস্থ্য বিধি বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সিলেট : সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবারেও সিলেটের রাস্তায় কঠোর ছিল পুলিশ। সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশের কঠোর অবস্থান ও তল্লাশির কারণে গতকালও সিলেটের রাজপথ ছিল অনেকটা যান ও জনশূন্য। সকাল থেকে নগরীর ৪৬টি চেকপোস্টে অবস্থান নেয় পুলিশ।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন চলছে। কিন্তু তা অমান্য করে বিনা কারণে ঘর থেকে বের হতে দেখা যায় অনেক মানুষকে। তাছাড়া অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, দোকানপাট অর্ধ শার্টারে খোলা রাখা ও মাস্কবিহীন চলাচলের কারণে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মামলা দেওয়া ও জরিমানা অব্যাহত রেখেছেন।
রাজশাহী : করোনা সতর্কতায় রাজশাহীতেও শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। গতকাল সকাল থেকেই মাঠে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ থাকা দোকানপাট খোলেনি। তবে মানুষের চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
ময়মনসিংহ : কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনে ময়মনসিংহ নগরীতে দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও মানুষের চলাচল বেড়ে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় নিয়ন্ত্রণে আসে।
রংপুর : রংপুরের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবির একাধিক টিম মাঠে টহল দিচ্ছেন। রংপুরের প্রধান সড়কের পাশে দোকানপাট খোলা না থাকলেও অন্যান্য সড়কের পাশের ব্যবসায়ীরা দোকানের একটি শাটার খুলে ব্যবসা করতে দেখা গেছে।