শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

নেতৃত্ব ও মানবিকতায় শেখ হাসিনা

করোনাকালে নতুন হিসাব-নিকাশ, প্রশংসা দেশ-বিদেশে, সবকিছু সামাল দিচ্ছেন শক্ত হাতে

রফিকুল ইসলাম রনি

নেতৃত্ব ও মানবিকতায় শেখ হাসিনা

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের লড়াইটা অন্য দেশগুলোর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে বিশাল জনগোষ্ঠীকে সীমিত সম্পদ নিয়ে লড়তে হচ্ছে। পুরো পৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন হিমশিম খাচ্ছেন তখন মহামারীর শুরু থেকেই জীবন ও জীবিকা দুটোর ওপরই গুরুত্ব দিয়ে একাই লড়ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সঠিক নির্দেশনায় কেটেছে টিকা সংকট।

দেশব্যাপী শুরু হয়েছে গণটিকা দান। করোনার মধ্যেও অর্থনীতির চাকা রয়েছে সচল। চলমান রয়েছে মেগ্রা প্রকল্পসমূহ। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সরকার ও দল নিয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর। গণভবন থেকে সবকিছু কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন তিনি। আর এ কারণেই নেতৃত্ব ও মানবিকতায় অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সরকার ও দলের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা এমনটাই মনে করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব আর কৌশলী অবস্থানের কারণেই মহামারী করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ আজ নতুন পরিচিতি পাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। যার স্বীকৃতিও মিলছে বিশ্বপরিমন্ডলেও। সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্বে দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। দলীয় প্রধান হিসেবেও নিজেকে নিয়ে গেছেন উচ্চশিখরে। যে দলে আছে লাখো কোটি নিবেদিত নেতা-কর্মী। সংকটে ও দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। করোনা মোকাবিলায় দুঃসময়ের কান্ডারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর নির্দেশনা পেয়েই জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের প্রতিটি এলাকার আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা যার যার অবস্থান থেকে অসহায়, অভুক্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন।

সরকার পরিচালনার পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতা, বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়েও খোঁজখবর রাখছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। কখনো নেতাদের গণভবনে ডেকে, কখনো টেলিফোনেই প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সংগঠন শক্তিশালী করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলার কমিটিও গঠনের নির্দেশনা দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

সরকার ও দলের একাধিক নীতিনির্ধারক বলছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত এক যুগ সাফল্য ও কৃতিত্বের সঙ্গেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অনেক অর্জন। সে অর্জনে সবচেয় বড় ভূমিকা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর অর্জন অসাধারণ এবং নেতৃত্ব অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি সবার আস্থার প্রতীক।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সূত্র জাতৃণ, করোনার মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স বা অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যস্ততা গত বছরের তুলনায় আট মাসে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। কারণ কভিড-১৯ মহামারীর ফলে সরাসরি বৈঠক বা যোগাযোগের পরিবর্তে তা অনলাইনে বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এ অনলাইন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ বাড়ানোর ফলে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ত্বরান্বিত করেছে। কারণ এর মাধ্যমে তিনি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকের পাশাপাশি তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালে যেখানে ৪৭৫টি ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছিলেন সেখানে গত আট মাসেই তাঁর এ অনলাইন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩টিতে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনলাইন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বেড়েছে কারণ মহামারীতে সশরীরে সভা করা কঠিন। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী যেসব অনলাইন মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন সেগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০২০ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ১ হাজার ৫৫৮টি স্থানে অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্ত হন সেখানে তিনি জনপ্রতিনিধি, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।’ মহামারীকালে প্রধানমন্ত্রী অনলাইনের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান ও প্রধান প্রধান বৈশ্বিক কনফারেন্সেও অংশ নেন যেগুলো আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণ করে এবং বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত দেশের স্বার্থে বৈশ্বিক প্রচারাভিযান পরিচালনা করে। মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে জুম মিটিং প্রান্তিক কর্মীদের সংকট ব্যবস্থাপনা এবং জাতি গঠনের অন্যান্য কর্মকান্ডে অন্তর্ভুক্তিমূলক অনুভূতি দিয়েছে। এটি আমাদের মতো মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং আরও জুনিয়রদের দেশের শীর্ষ সরকারি অফিসের সঙ্গে এক কাতারে শামিল করেছে। এটা দায়িত্ব পালনে আমাদের উজ্জীবিত করছে।

সরকার ও দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক যুগে বদলে গেছে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, নিজস্ব অর্থায়নে ৪৫০টি মডেল মসজিদ, সোয়া লাখ গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে ঘর প্রদান, মেট্রোরেল নির্মাণের মতো মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি শতভাগ বিদ্যুতায়ন, প্রতিটি মানুষের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, শক্ত অর্থনীতি তৈরি করা, শতভাগ শিক্ষার হার অর্জন, দারিদ্র্য নির্মূল, করোনা সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জীবন ও জীবিকা সচল রাখতে চালকের আসনে সঠিক নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ৩ জুন দেশের ৫০তম জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এবারের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ১৯৭২ সালে দেশের প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বাংলাদেশের বাজেটের আকারও ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

করোনাভাইরাস মহামারীতে সৃষ্ট নজিরবিহীন সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনে থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক ধীশক্তি ও দূরদর্শিতার যোগ্য উত্তরাধিকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদ মীমাংসা, আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের নেতৃত্ব প্রদান, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানবিক কারণে আশ্রয় প্রদান- এ বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তিনি সব সময়ই আপসহীন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা নিঃসন্দেহে একজন অবিসংবাদিত নেত্রী। গুণ, মেধা, যোগ্যতা ও নেতৃত্বের প্রশ্নে তিনি নিজেকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেছেন। তাঁর দৃঢ়চেতা মনোভাব তাঁর অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। নেতৃত্বদান এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দলে ও রাষ্ট্রে তাঁর সঙ্গে তুলনার মতো দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিত্ব নেই। কখন কী করতে হবে তিনি জানেন। তিনি স্পষ্টবাদী। তিনি এককভাবে করোনা মোকাবিলা করছেন।’ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারীতে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে লাখ লাখ লোক মারা যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মহামারী মোকাবিলায় দিনরাত জনসেবায় নিমগ্ন হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। ফলে ইউরোপ-আমেরিকার মতো বাংলাদেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেনি। এমনকি গণমানুষের পাশে সরকার সক্রিয় থাকায় কর্মহীন মানুষদেরও না খেয়ে থাকতে হয়নি। অসহায়দের ঘরে ঘরে খাদ্য ও আর্থিক সাহায্য পৌঁছে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘শেখ হাসিনা দলীয় নেতা ও সরকারপ্রধান হিসেবে সব সংকীর্ণতার নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের জায়গায় এসেছেন। করোনা সংকট মোকাবিলা করে দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাতে শেখ হাসিনা এখন অবিকল্প নেতৃত্ব। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন দ্বারা প্রভাবিত শেখ হাসিনা জাতির পিতার অসম্পূর্ণ কাজগুলোই সম্পূর্ণ করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সর্বস্তরের নেতা-কর্মী দলীয় সভানেত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। একই সঙ্গে আমাদের দলের সাংগঠনিক অবস্থা চাঙা করতে নানা নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন দলীয় সভানেত্রী।’

সর্বশেষ খবর