বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া বাণিজ্যে অগ্রাধিকার বেসরকারি খাত

বিনিয়োগ চুক্তি হচ্ছে আগামী মাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া বাণিজ্যে অগ্রাধিকার বেসরকারি খাত

যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট (টিফা) করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য দুই দেশের সরকার সম্মত হয়েছে। এই চুক্তি সম্পন্ন হলে অস্ট্রেলিয়ার  কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সব খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রাধিকার পাবে। অবশ্য একই ধরনের সুবিধা পাবে বাংলাদেশও।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে চুক্তির বিষয়ে ভেটিং সম্পন্ন হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সরকারও চুক্তির বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী মাসে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী ভার্চুয়াল মাধ্যমে চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।

দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি করেছে ৮৩৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, অপরদিকে আমদানি করেছে ৮৮৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দ্বিপক্ষীয় এই চুক্তির আগে সুবিধাভোগীদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আন্তমন্ত্রণালয় মতামত নেওয়া হয়েছে। এর পর চুক্তির  খসড়াটি চূড়ান্ত করে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর পর দেশটির সরকার অনুমোদন দেয়। গত বছর চুক্তির যে খসড়াটি পাঠিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া সেটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়া টিফার মাধ্যমে বাংলাদেশের সব খাতে বিনিয়োগ সহায়তার কথা উল্লেখ করেছে। খসড়ার ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, টিফা কাঠামোর মাধ্যমের তৈরি পোশাক, কৃষি, কৃষি বাণিজ্য, মৎস্য, ফুড অ্যান্ড  বেভারেজ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ম্যানুফ্যাকচারিং, তথ্য ও  যোগাযোগ প্রযুক্তি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং শিক্ষাসেবা ছাড়াও উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে সব ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে। খসড়ার ১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, অংশীদ্বয় সেবা এবং পণ্য উভয় খাতেই বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। একে অপরের  কোম্পানি বা সংস্থার বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগে  বৈচিত্র্য আনতে একে অপরের সংস্থা বা কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার সুবিধা প্রদান করবে। ২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হবে।

কী আছে খসড়ায় : বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা টিফার খসড়ার শুরুতে যে মৌলিক নীতির কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো- (১) উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা এবং নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি করা; (২) দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা; (৩) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দ্রুততর করার জন্য স্বচ্ছ ও মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা; (৪) উভয় দেশ একে অপরকে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ প্রদান করবে যা প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে; এবং (৫) উভয় দেশই বেসরকারি খাতের যোগাযোগকে উৎসাহিত করবে।

উভয়পক্ষের মতামত নিয়ে চুক্তির কিছু বিষয় সংশোধন হয়েছে। তবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের মৌলিক নীতিগুলো একই আছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রপ্তানি-২) আবদুর রহিম খান বলেন, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। চুক্তির অধীনে দুই দেশের দুটি কমিটি থাকবে, যারা বছরে অন্তত একবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন।

এর আগে ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে টিফা চুক্তির প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ তাতে সম্মত হয়নি। পরে কিছু বিষয় পরিবর্তন করে টিফার বদলে টিকফা চুক্তির প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর ওই বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। এখন দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টিফা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রস্তাবিত এই চুক্তিটির নাম হচ্ছে ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট’ (টিফা)।

সর্বশেষ খবর