শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

যুবরাজ সালমানই এখন অঘোষিত বাদশাহ

প্রতিদিন ডেস্ক

যুবরাজ সালমানই এখন অঘোষিত বাদশাহ

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুুল আজিজের শারীরিক অসুস্থতার পর দেশ চালানোর গুরুদায়িত্ব পালন করছেন তাঁর পুত্র যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। বাবার অসুস্থতায় তিনিই হয়ে উঠেছেন সৌদি আরবের ‘অঘোষিত বাদশাহ’। সূত্র : রয়টার্স। খবরে বলা হয়, কয়েক মাস ধরে সৌদি আরবে সব প্রেসিডেনশিয়াল বৈঠক, রাষ্ট্রীয় অতিথিদের স্বাগত জানানোর মতো কাজগুলো করছেন যুবরাজ সালমান। এর মধ্যে সৌদি বাদশাহকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে কালেভদ্রেই।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের জুনে সৌদি সিংহাসনের উল্টরাধিকারী ঘোষণার পর  থেকেই দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা বিবেচনা করা হয় ৩৬ বছর বয়সী যুবরাজকে। তবে কিছুদিন আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ আর উপসাগর সহযোগী সংস্থার (জিসিসি) সম্মেলনে নেতৃত্ব  দেওয়ার আগে তার প্রভাব এত তীব্রভাবে কখনই বোঝা যায়নি। বার্ষিক ওই সম্মেলনে সাধারণত বাদশাহ সালমানই নেতৃত্ব দেন। কিন্তু এ বছর তার পরিবর্তে উপস্থিত ছিলেন সৌদি যুবরাজ।

আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের ইয়াসমিন ফারুক একটি বার্তা সংস্থাকে বলেন, একজন ক্রাউন প্রিন্স সৌদি আরবের প্রকৃত শাসক হয়ে উঠেছেন, বিদেশি প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে বৈঠক করছেন বা শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন, এর আগে এমন ঘটনা ঘটেছে কেবল তখনই, যখন সৌদি বাদশাহদের শরীর খারাপ ছিল। ইয়াসমিন ফারুক উল্লেখ করেন, এখন নতুন যে বিষয়টি দেখা যাচ্ছে, তা হলো বাদশাহ তাঁর সব দায়িত্ব পরিপালন করার পরও রাষ্ট্রীয়ভাবে ও সংবাদমাধ্যমে যুবরাজের ভূমিকাকে জোরালো করে প্রচার করা হচ্ছে।

খবরে আরও বলা হচ্ছে, এই যুবরাজ নিজেকে উদারপন্থি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। সৌদির সমাজব্যবস্থায় তিনি বিভিন্ন সংস্কার আনছেন। নারীদের গাড়ি চালানো ও সরকারি চাকরি করার অনুমতি দিয়েছেন। বিনোদনের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিনোদন কেন্দ্র চালু করেছেন। পর্যটক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সৌদির দুয়ার খুলে দিয়েছেন যুবরাজ। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদির অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া বাদশাহ সালমানের চেয়ে যুবরাজ অনেক বেশি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। তিনি সৌদির আকাশসীমা দিয়ে ইসরায়েলি উড়োজাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরব গালফ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিন ডিওয়ান মনে করেন, বাদশাহ সালমানের দীর্ঘজীবিতা থেকে সুবিধা পাচ্ছেন যুবরাজ। যুবরাজ যেসব তারুণ্যদীপ্ত ও অপ্রচলিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সেগুলো কোথাও বাধা পাচ্ছে না।

এসব পরিবর্তনের পাশাপাশি যুবরাজের বিরুদ্ধে সৌদি আরবে ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর ধরপাকড় ও নাগরিকদের বাক্স্বাধীনতা দমনের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনায় যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়।

এদিকে সৌদি সরকারের উপদেষ্টা আলি শিহাবি দাবি করেন, বাদশাহ সালমান সুস্থ আছেন। গত বুধবার এক টুইটে তিনি বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে বাদশাহ খুব ভালো আছেন। তিনি প্রতিদিন ব্যায়াম করছেন। তবে তাঁর বয়স ৮৬ বছর। এই বয়সে তিনি মাস্ক পরে থাকতে অস্বস্তি বোধ করেন। তা ছাড়া মানুষকে সাদরে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে তাঁর করমর্দন করার অভ্যাস আছে। এসব কারণে তাঁকে নিরাপদ রাখতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। তাঁকে ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর