বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

উত্তরা-গাজীপুর সড়ক যেন নরক

♦ বিআরটি নির্মাণকাজে নেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ♦ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে সামগ্রী ♦ সড়কের মাঝখানে ঝুঁকিপূর্ণ গার্ডার, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার ♦ খেই হারাচ্ছেন গাড়ি চালকরা ♦ প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা

হাসান ইমন

উত্তরা-গাজীপুর সড়ক যেন নরক

বিআরটির বিশৃঙ্খল কাজ। গাড়ি ও মানুষ চলাচল সবই ঝুঁকিপূর্ণ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর ব্যস্ততম উত্তরা-গাজীপুর সড়ক যেন নরকে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প কাজের অব্যবস্থাপনায় জীবনঝুঁকি ও ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হয় যাত্রী-পথচারীদের। দুর্ঘটনার পর এখন কাজ বন্ধ থাকলেও জানমালের নিরাপত্তায় কোনো ধরনের ব্যবস্থা না রাখায় ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হচ্ছে পরিবহন ও পথচারীদের। সড়কের মাঝখানে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ গার্ডার ও যত্রতত্র ফেলে রাখা স্লাব রাস্তার বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে। স্লাবগুলোর রড বের হয়ে থাকায় যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেলের চালকদের দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। সড়কজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। সার্ভিস রুটগুলো ভেঙে মূল সড়কে মিশিয়ে দেওয়ায় ফুটপাত লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। বিআরটি প্রকল্পের কাজে সড়ক প্রশস্ত করায় ফুটওভার ব্রিজগুলো এখন সড়কের মাঝখানে এসে পড়েছে। এতে চরম ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজের কাছে আসতে হচ্ছে। নির্মাণাধীন এলাকায় সড়ক অসমান ও খানাখন্দ থাকায় গাড়ি চালাতে চালকরাই খেই হারিয়ে ফেলেন। এতে এ সড়কে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী-গাজীপুর পর্যন্ত সড়কটিতে সারা দিনই যানজট লেগে থাকে। গতকাল বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিমানবন্দর অংশ বিআরটি প্রকল্পের শেষ গন্তব্যস্থল। এ অংশের কাজ চলমান থাকায় সড়কটির মাঝখানের অনেকাংশ বন্ধ রয়েছে। এতে সড়কটির দুই পাশ সরু হয়ে যাওয়ায় দুই পাশেই যানজট লেগে থাকছে। বিমানবন্দর থেকে একটু সামনেই সড়কের মাঝখানে লোহার বড় পাত, প্লাস্টিকের পাইপসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা রয়েছে। এখানে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখা যায়নি। আর একটু সামনে গেলে সড়কের পাশে বালুর স্তূপ। ঢেকে না রাখায় বাতাসে উড়ছে। পথচারীদের নাক-মুখে রুমাল চেপে হাঁটতে হয়। জসীমউদ্দীন মোড়ে সড়কের মাঝখানে একটার ওপর আরেকটা স্তূপ করে গার্ডার রাখা আছে। এর পাশে কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। গার্ডারের এক পাশ সড়কের ওপর রয়েছে। এ অংশে গণপরিবহনগুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এর একটু সামনেই সড়কের মাঝখানে যত্রতত্র নির্মাণাধীন সরঞ্জাম পড়ে আছে। বিশেষ করে স্লাবগুলো একটার ওপর আরেকটা রাখা হয়েছে। স্লাবগুলোর রড সড়কের এক পাশে চলে এসেছে। নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। সড়কের পুব পাশে উত্তরা রাজউক মডেল স্কুল, নবাব হাবিবুল্লাহ স্কুল ও কলেজ, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পশ্চিম পাশে উত্তরা হাই স্কুলসহ দুই পাশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি হলে শিক্ষার্থীরা রাস্তা পারাপারে ভোগান্তির শিকার হয়। পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয় তাদের। এ ছাড়া বিআরটি প্রকল্পে রাস্তা প্রশস্ত করায় সার্ভিস রুটগুলো ভেঙে মূল সড়কে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগের মূল সড়কের পাশের ফুটওভার ব্রিজগুলো এখন সড়কের মধ্যখানে হয়ে গেছে। ফলে পথচারীদের রাস্তা পার হয়ে ফুটওভার ব্রিজ পর্যন্ত আসতে ঝুঁকি নিতে হয়।

উত্তরা থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ওপরের অংশে মোটামুটি কাজ শেষ। তবে নিচের অংশে বেহাল অবস্থা। সড়কের দুই পাশে একটি করে পরিবহন যাতায়াত করতে পারে। এ সড়কের বেশি অংশই খানাখন্দ। এতে পরিবহন চালকরা গাড়ি চালাতে খেই হারিয়ে ফেলেন। ফলে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনাও ঘটছে। আর মিডিয়াম অংশে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। টঙ্গী অংশে সড়কের মাঝখানে বড় বড় লোহার পাইপ ও পাত পড়ে আছে। একই সঙ্গে টঙ্গী বাসস্ট্যান্ডে সড়কের মাঝখানে বড় গর্ত করে রাখা হয়েছে। এ গর্ত ঘেঁষে বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী করা হলেও যে-কোনো সময় পরিবহনগুলো গর্তে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে সড়কের মাঝবরাবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে। কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় পাশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে।

স্থানীয় লোকজন, পথচারী, যাত্রীর অনেকেই সোমবারের দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, যে-কেউ এ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারত। নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চরম অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে আবার প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। দুর্ঘটনাস্থলের কাছের একটি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল খালেক বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই দেখছি সড়কে গাড়ি চলার মধ্যেই ক্রেন দিয়ে গার্ডারসহ ভারী জিনিস ওপরে তোলা হচ্ছে। আজ না হয় কাল এমন একটা দুর্ঘটনা হতোই।’ সার্বিক বিষয়ে জানতে বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তায় বিষয় উল্লেখ করে বক্তব্য চাইলে তিনি কল ব্যাক করেননি। একই বিষয়ে জানতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নুরীকে মুঠোফোনে কল দিলেও রিসিভ করেননি।

 

সর্বশেষ খবর