বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

নাদিয়ার ছোট্ট শরীরে ২৩ ক্ষত মৃত্যুতেই মুক্তি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

রীতিমতো গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। মধ্যযুগীয় নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি ১০ বছর বয়সী শিশু নাদিয়া। যে বয়সে তার এ বাড়ি ও বাড়ি ছোটাছুটি করার কথা, ঠিক সে বয়সেই তার মুক্তি মিলেছে ভয়ংকর মৃত্যুতে। ছোট্ট শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। তাতেও শেষ ছিল না বর্বরতার। দেহে পচনও ধরেছিল। আইনি ঝামেলা এড়াতে শিশু নাদিয়ার প্রাণহীন নিথর দেহ ফ্রিজিং গাড়িতে রেখে অসহায় বাবার সঙ্গে আপস রফার চেষ্টা করেছিলেন পাষণ্ড গৃহকর্ত্রী    ফরহাদ বাঁধন মৌ। তবে শেষমেশ রফাদফা না হওয়ায় সেই গৃহকর্ত্রী এখন শাহজাহানপুর থানা পুলিশের কবজায়।

শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মোল্ল্যা জানান, নাদিয়া ও তার বোন নাজমা শাহজাহানপুর থানাধীন শান্তিবাগ এলাকার ৮৭/১ নম্বর বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে আসছিল। গত রবিবার এ শিশুটি মারা যায়। পরে গৃহকর্ত্রী মৌ শিশুটির লাশ তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ফ্রিজিং গাড়িতে রাখেন। এর আগে মৃত্যুর পর কয়েক ঘণ্টা লাশটি তার বাসায় রাখা হয়েছিল। এতে শিশুটির লাশ কিছুটা পচে গেছে। সোমবার পুলিশ সংবাদ পেয়ে সেই শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। জানা গেছে, গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। এর আগে লাশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন শাহজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোছা. সোহেলী আক্তার। সুরতহাল রিপোর্টে নাদিয়ার শরীরজুড়ে ২৩টি আঘাতের চিহ্ন উল্লেখ করা হয়েছে। নাদিয়ার মাথায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষতচিহ্ন আছে। এ ছাড়া কপালের ডান পাশে, বাম কানের পেছনে আঁচড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ডান গালে থেঁতলানো ফোলা জখম। নাক এবং মুখে রক্ত মাখা। গলায় লালচে দাগ। বুক ও পেটের বিভিন্ন অংশে লালচে-কালো দাগ এবং শরীরের চামড়া উঠানোসহ আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছোট্ট নাদিয়ার শরীরের এমন কোনো জায়গা বাদ নেই, যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করা হয় পুরো শরীর। গ্রেফতার গৃহকর্ত্রী নিজেকে ‘অপরাধ অনুসন্ধান’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। শিশু নাদিয়ার বাবা নাজিম উদ্দিন বলেন, তাদের বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর উলুয়ার চাপ গ্রামে। গত দেড় বছর ধরে নাদিয়া শাহজাহানপুরের শান্তিবাগের শান্তিনিকেতন ৮৭/১ নম্বর বাড়ির ২/সি নম্বর ফ্ল্যাটে মৌর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে আসছিল। তার বড় বোন নাজমাও (১৪) দীর্ঘ সাত বছর ধরে একই বাসায় কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, গত রবিবার সকাল ৭টার দিকে গৃহকর্ত্রী তাকে মোবাইলে ফোন করে জানান, তার মেয়ে অসুস্থ। খবর শুনে ওই রাতে তিনি ট্রেনে করে ঢাকায় আসেন। এরপর ওই বাসায় গিয়ে তার মেয়ের সন্ধান করেন। তখন গৃহকর্ত্রী জানান, তার মেয়ে অসুস্থতার কারণে মারা গেছে। বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। সেজন্য তাকে ৭০ হাজার টাকায় ঢাকার সাভারে একটি বাড়ি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে সবকিছুর আগে তিনি তার মেয়েকে দেখতে চান। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন তিনি। কোথাও মেয়েকে দেখতে পাননি তিনি। না পেরে সোমবার রাতে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ তার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে।

 

সর্বশেষ খবর