সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের অধীনে ভোটে না

আট রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে জানাল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের অধীনে ভোটে না

আট রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপি নেতারা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর আটজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা আগামীতে বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছে না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ পরিবেশ না হলে বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিশেষ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে যে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না, সে কথা পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছাড়াও বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংকিং খাতের বিপর্যয়কর অবস্থা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা, বাকস্বাধীনতা হরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল সকালে রাজধানী ঢাকায় গুলশান-২-এ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসায় (এবিসি হাউসে) সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা ধরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ডেনমার্ক, নরওয়ের রাষ্ট্রদূতরা অংশ নেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম এবং মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ অংশ নেন।

বৈঠকে বিএনপি নেতারা রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করে বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এখানে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে একটা অবৈধ সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। তারা আগের বছরগুলোর মতো যেনতেনভাবে আরেকটা পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে এই অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখতে চায়। ফলে এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কখনই সম্ভব নয়। বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের পরিষ্কার ভাষায় বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী এবং আপনারা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সেটা পরিষ্কার করেছেন কি না- এমন প্রশ্নে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তা আমরা খোলাখুলিভাবে বলেছি। বিশ্বের যারা বাংলাদেশের ওপর নিবিড়ভাবে কাজ করছে, পর্যবেক্ষণ করছে, সবার কাছে এটা পরিষ্কার করা হয়েছে যে, বর্তমান দখলদার, অনির্বাচিত সরকারের অধীনে বাংলাদেশের জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দমতো প্রতিনিধি বা সরকার কিংবা তাদের সংসদ নির্বাচিত করতে পারবে না। এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত যেভাবে বলা হচ্ছে, বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরও বিষয়টি জানা আছে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এর কারণগুলো সবারই জানা। এ কথার পেছনে যে কারণগুলো আছে, সেই কারণগুলো নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে, বিশ্লেষণ হচ্ছে।

বিষয়গুলো নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী মনে করে? এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, তারা (ইইউ) কী মনে করে তা তারাই বলতে পারবে। আমি তো বলতে পারব না। আপনারা তো সবকিছুই জানেন- দেশের মানুষ যেভাবে দেশের বর্তমান অবস্থা ও নির্বাচনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে, সারা বিশ্বের যত গণতান্ত্রিক দেশ ও সংস্থা আছে তারা সবাই কী নিবিড়ভাবে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণ করছে, এরই অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেখছে, বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক অবস্থাটা কী? মানবাধিকার, আইনের শাসন, বাক্?স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেমন? বিশেষ করে আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশের ভিতরে ও দেশের বাইরে যে শঙ্কা কাজ করছে, তার ওপর তো তাদের স্বাভাবিকভাবেই একটা দৃষ্টি আছে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আজকের (রবিবার) এ বৈঠক হয়েছে।

নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে কী আলাপ হয়েছে, এ প্রশ্নে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সেটাই তো। বাংলাদেশে যে নির্বাচনী ব্যবস্থাটা ভেঙে পড়েছে, এখানে যে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে একটা অবৈধ সরকার ক্ষমতায় বসে আছে, এ প্রেক্ষাপটেই তো আলোচনা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপট থাকার কারণেই তো এসব আলোচনা চলছে। আর সে জন্যই আমরা এই অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না।

বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে, তাহলে বাংলাদেশ যে সংকটের দিকে যাবে, এ শঙ্কা দেশের ভিতরে যেভাবে কাজ করছে, দেশের বাইরেও একইভাবে কাজ করছে। এ শঙ্কা থেকেই তারা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) জানতে চাইছে, কীভাবে আগামী নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে, কীভাবে এটাকে নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করা যায়। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র ও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সার্বিক অবস্থা নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে জনগণ যেমন অবহিত, তেমনি আন্তর্জাতিক বিশ্বও অবহিত। এ জন্যই তারা এবারের নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। তারা সবাই চাইছেন বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, যাতে সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দমতো প্রতিনিধি, সরকার ও সংসদ নির্বাচিত করতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর