বুধবার, ৩ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সুদান থেকে দেশে ফেরার পথে ৬৮২ বাংলাদেশি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সংঘাতময় সুদান থেকে দেশে ফেরার পথে রয়েছেন ৬৮২ বাংলাদেশি। গতকাল তারা খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানের উদ্দেশে বাসে রওনা হয়েছেন। পোর্ট সুদান পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে তাদের। পোর্ট সুদান থেকে তারা জাহাজে আসবেন সৌদি আরবের জেদ্দায়। পরে জেদ্দা থেকে তাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হবে বিমানে। খার্তুমে বাংলাদেশ দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় ফেরানো হচ্ছে এই বাংলাদেশিদের। বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ জানিয়েছেন, গতকাল তিন জায়গা থেকে মোট ১৩টি বাসে করে এই বাংলাদেশিরা পোর্ট সুদানের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রথমে ৯টি বাসে করে সকাল ৯টার দিকে ৩৫০ জন বাংলাদেশি রওনা করেন। আর আল-সালাম হোটেল যারা ছিলেন, তাদের জন্য বড় বাস যেতে পারেনি। পরে তাদের ছোট বাসে করে খার্তুমের শারিয়া আল সিত্তিন ও মাদানি স্ট্রিটের চৌরাস্তায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে বাকি বাসগুলো রওনা করেছে। পোর্ট সুদানের পথে অবস্থান নেওয়া ৫৯ জনকে আলাদা করে পাঠানো একটি বাসে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাসযাত্রায় ১৫ ঘণ্টার মতো সময় লেগে যেতে পারে। প্রবাসীরা জানান, দেশে ফেরার জন্য তিন জায়গায় অবস্থান নিয়ে ছিলেন বাংলাদেশিরা। সোমবার রাত থেকে বাস ছাড়ার স্থান খার্তুমের শারিয়া আল সিত্তিন ও মাদানি স্ট্রিটের চৌরাস্তা এবং আল-সালাম হোটেলে এসে জড়ো হন ৬২৩ জন। এ ছাড়া সুদান ছাড়ার জন্য জড়ো হওয়ার পর খার্তুমের দিকে যাওয়ার সময় কয়েক দিন আগে ডাকাতির শিকার হয়েছিলেন ৫৯ বাংলাদেশি। পরে নিজেদের মতো করে পোর্ট সুদানের উদ্দেশে রওনা করে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান নেন তারা। বাংলাদেশিদের উদ্ধারে কাজ করার জন্য কয়েক দিন আগে থেকে পোর্ট সুদানে অবস্থান করছেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ। প্রয়োজনীয় অর্থ ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে জেদ্দা কনস্যুলেটের একটি দল। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, যাদের পাসপোর্ট আছে, তাদের তালিকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমরা সৌদি দূতাবাসকে দেব। এরপর তারা সুদান কর্তৃপক্ষের প্রক্রিয়া শেষ করবে। পোর্ট সুদানের এই কার্যক্রম শেষ হলে বাংলাদেশিরা সৌদি জাহাজে জেদ্দার উদ্দেশে রওনা করবে।

এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জেদ্দার দুটি বাংলাদেশ স্কুলে সুদান প্রবাসীদের জন্য খাদ্য, পানীয়, ওষুধ ও সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খার্তুম থেকে পোর্ট সুদানে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে প্রবাসীদের যেন শারীরিক কোনো সমস্যা না হয় এ বিষয়টি মাথায় রেখে পোর্ট সুদানেও বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের জন্য খাদ্য, পানীয়, ওষুধ এবং সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সুদান প্রবাসীরা যেদিন জেদ্দা পৌঁছবেন সেদিন থেকেই বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশিদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

সুদান থেকে ফেরানোর পরিকল্পনা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছিলেন, জেদ্দায় পৌঁছানোর পর বাংলাদেশিদের সাধারণ ফ্লাইটে করে ফেরত আনা হবে। যদি প্রয়োজন হয় চার্টার্ড ফ্লাইটেরও ব্যবস্থা করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ বিমান এবং বিমানবাহিনী উভয়ই প্রস্তুত আছে। তিনি জানান, আমরা যখনই পারি যতজনকে পারি নিয়ে আসব। একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বাংলাদেশি না হলে পাঠাব না- বিষয়টি সে রকম নয়। প্লেনের ব্যবস্থা সাপেক্ষে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরত আনা হবে। গত ১৫ এপ্রিল সুদানের সশস্ত্র বাহিনী এসএএফ এবং আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে লড়াই শুরুর পর এ পর্যন্ত কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছে। এ লড়াইয়ে রাজধানী খার্তুম ও আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে। সরকারি হিসাবে, সুদানে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। পরিস্থিতির ক্রম অবনতি ঘটায় বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সর্বশেষ খবর