১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দুই সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীরউত্তম, বীরউত্তম শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার এবং শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রম খুনের ৪৮ বছর পর মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন খন্দকার নাজমুল হুদার মেয়ে।
মামলায় ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর (অব.) আবদুল জলিলকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করেন নিহতের মেয়ে ও জাতীয় সংসদের এমপি নাহিদ ইজহার খান। এ বিষয়ে গতকাল শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, মামলাটি হয়েছে। মামলা নম্বর ১৮। আপাতত আমরাই মামলাটি তদন্ত করছি।
জানা গেছে, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে শুধু মেজর (অব.) আবদুল জলিল বেঁচে আছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাদী নাহিদ ইজহার খান উল্লেখ করেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তার বয়স যখন পাঁচ বছর ও তার বড় ভাইয়ের বয়স ৮ বছর, তখন তার বাবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭২ বিশেষ কমান্ডার হিসেবে রংপুরে কর্মরত ছিলেন। ওই অবস্থায় ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনীর বিপথগামী, বিশৃঙ্খল সদস্যদের হাতে তার বাবা নিহত (শহীদ) হন। তার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম এবং বীর উত্তম শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার নিহত (শহীদ) হন। বাদী উল্লেখ করেন, পরে বড় হয়ে বাবার কোর্সমেট, কলিগ ও বিভিন্ন সূত্র থেকে নিজেদের অনুসন্ধানে জানতে পারেন- ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, সকালে তার বাবাসহ অন্য দুই সামরিক কর্মকর্তা ১০ ইস্ট বেঙ্গলের অফিসে উপস্থিত ছিলেন। যেটি তখন জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেলে ছিল। সকালে তার বাবা যখন নাস্তা করছিলেন, তখন দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি থেকে দশম ইস্ট বেঙ্গলের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নওয়াজেশের কাছে টেলিফোন আসে। এরপর নাজমুল হুদাসহ অন্য দুই সামরিক কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে আসে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা। বাদী উল্লেখ করেছেন, আমাদের অনুসন্ধানে আরও জানতে পারি- তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান ও জাসদ নেতা লে. কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও এবং সৈনিকরা সংঘবদ্ধভাবে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এজাহারে আরও বলা হয়, তৎকালীন লে. কর্নেল সিরাজ ও মেজর মুকতাদির, তৎকালীন ক্যাপ্টেন সাবেক পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তারা আরও জানতে পেরেছেন- দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা জেসিও ও সৈনিকদের সঙ্গে মেজর মো. আসাদউজ্জামান (অব.)- এ তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করার পর বেয়োনেট চার্জ করে। নাহিদ ইজহার খান উল্লেখ করেছেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধে তার বাবা যোগদান করেন এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন যশোর ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব- সেক্টর কমান্ডার। তার সরাসরি নেতৃত্বে পরিচালিত বিখ্যাত গরিবপুরের ট্যাংক যুদ্ধ, চৌগাছা যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাজিত হয়েছিল এবং ৬ ডিসেম্বর তার বাবার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসেবে যশোর হানাদার বাহিনীমুক্ত হয়। তাদের জন্য সময়টা এতটাই প্রতিকূল ছিল যে, একবার ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কাছে তার ভাই গিয়েছিলেন বাবার নামে রাস্তার নামকরণের জন্য। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছিল। তিনি (সাদেক হোসেন খোকা) তার ভাইয়ের আবেদনপত্র হাতে নিয়ে তার বাবার নাম দেখে তাকে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায়। দেশবাসী ন্যায়বিচার পাচ্ছে। তাই তিনি তার বাবাসহ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক কর্মকর্তার হত্যার বিচার দাবি করছেন।
