বুধবার, ২৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র

টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, লাঠিচার্জের বিপরীতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ইটপাটকেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র

রাজধানীর ধানমন্ডিতে গতকাল পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষ, বাসে আগুন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বিকালে ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় দলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ‘পদযাত্রা’ পালনকালে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ, পরে টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় সমগ্র এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেন। ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রাস্তায় বিআরটিসির একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও ধানমন্ডি থানার সাবেক সভাপতি শেখ রবিউল আলম, সাবেক সদস্য সচিব সৈকতসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে দলটি জানিয়েছে। তবে ঘটনার আগেই ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও বিএনপি নেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। বিএনপির অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বাধা দিয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। আর পুলিশ বলছে, বিএনপির মিছিল থেকে তাদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল বিকালে রাজধানীর দুই এলাকায় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি দুটি পদযাত্রার কর্মসূচির আয়োজন করে। এর একটি ছিল ধানমন্ডিতে, অন্যটি গাবতলী এলাকায়। বেলা ৩টায় ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কে সমাবেশ শেষে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি জিগাতলা, সিটি কলেজ হয়ে ল্যাবএইড হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সায়েন্স ল্যাব মোড় পর্যন্ত যাওয়ামাত্রই সংঘর্ষ বেধে যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, পদযাত্রা নিয়ে তারা সিটি কলেজ এলাকায় যেতেই পুলিশ আটকে দেয় এবং নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির কর্মী-সমর্থকরাও এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩০-৩৫ জনের একটি মিছিল ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে সিটি কলেজের সামনে থেকে সায়েন্স ল্যাব হয়ে নিউমার্কেটের দিকে চলে যায়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল। কয়েকজনের মাথায় হেলমেটও দেখা যায়। ধানমন্ডির পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা হলো। কী কারণে পুলিশ টিয়ার শেল মারল, গুলি করল বুঝলাম না।’

এ বিষয়ে পুলিশের নিউমার্কেট এলাকার সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবেই পদযাত্রা হচ্ছিল। হঠাৎ করে মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা হয়। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য টিয়ার শেল নিক্ষেপসহ যা যা করার আমরা সেটা করেছি।’

পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা এখনো সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করিনি। আওয়ামী লীগ যদি দাবি মেনে পদত্যাগ করে, তাহলে বিএনপিকে আর সরকার পতনের আন্দোলন করতে হবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা করবে না। তাই অচিরেই আমরা সরকার পতনের আন্দোলনের ঘোষণা দেব।’

তিনি বলেন, “আমাদের শেষ কথা, ‘হটাও হাসিনা বাঁচাও দেশ, টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।” বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমাদের দাবি একটাই, তা হলো এই সরকারের পদত্যাগ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। যার যার ভোট সে দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১০ দফা। আর ১০ দফার মূলকথা হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এই ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের পদত্যাগ চাই, এই অবৈধ সংসদ বাতিল চাই। সরকারকে বলব, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় সরকার এসে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেখানে আমরা অংশগ্রহণ করব। আমরা আশা করি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এতে অংশগ্রহণ করবে। জনগণ যাকে ইচ্ছা ভোট দেবে, সে-ই সরকার গঠন করবে।’

কখনো বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে বলিনি- নজরুল : ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘আমরা কখনো বলিনি ক্ষমতা ছেড়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিন। আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছি। আজ পর্যন্ত আপনাদের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি।’ গতকাল বিকালে রাজধানীর গাবতলী থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পদযাত্রা-কর্মসূচিপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে এ পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দুপুরের আগে থেকেই খ- খ- মিছিল সহকারে হাতে রংবেরঙের প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে সমাবেশে আসতে শুরু করেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা জনগণের ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। ইতোমধ্যেই আমাদের অনেক সাথী প্রাণ দিয়েছেন। আমাদের অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা পালিয়ে আছেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছেন, দোকানে কাজ করছেন।’ সরকারের সহায়তায় একটা গোষ্ঠী বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সমাবেশ শেষে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পদযাত্রা শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। গাবতলী এলাকার বাগবাড়ীর আইএফআইসি ব্যাংকের সামনে থেকে পদযাত্রাটি টেকনিক্যাল ও কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে শ্যামলী শিশুমেলার বাঁ পাশ দিয়ে পঙ্গু হাসপাতাল হয়ে আগারগাঁও এলাকার ৬০ ফুট রোডে গিয়ে শেষ হয়।

সর্বশেষ খবর