ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৈরি হচ্ছে নির্বাচনি রোডম্যাপ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের এবং পরের কার্যক্রমের ধারাবাহিক বর্ণনা থাকছে এই কর্মপরিকল্পনায় (রোডম্যাপ)। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনি মালামাল কেনাকাটা থেকে শুরু করে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত সব কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকবে। সে অনুযায়ী নির্বাচনি প্রস্তুতি এগিয়ে নেবে ইসি সচিবালয়। ইতোমধ্যে ইসি সচিবালয় ‘তফসিল ঘোষণার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী কার্যক্রম’ শীষক একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। তবে এই খসড়ায় কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এই খসড়া উপস্থাপন করা হবে। কমিশন প্রতিটি কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সার্বিক কর্মকান্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা প্রেজেন্টেশন তৈরি করছেন। জানা গেছে, ইসির কর্মপরিকল্পনায় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনের বিষয়ও থাকবে।
সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ দেখেই আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্বাচনি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন। কেননা নির্বাচনি সংস্কারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশসহ (আরপিও) অন্যান্য নির্বাচন আইন-কানুন সংশোধন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। অন্যদিকে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আইন-বিধি সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের বাজেট প্রস্তুত করার কাজ চলমান রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনি রোডম্যাপে প্রায় এক ডজন বিষয় থাকতে পারে। তবে আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে রোডম্যাপের করণীয় বিষয়। সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করার পরিকল্পনা নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপও হতে পারে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। এ ছাড়া রোডম্যাপে আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কারের বিষয়ও থাকবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া, ভোট গ্রহণ, সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ, ভোট কেন্দ্র স্থাপন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণের নির্ধারিত টাইম ফ্রেম রাখার চিন্তা করছে কমিশন। জানুয়ারির মধ্যে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন দেখে সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট কমিটি। এ ছাড়া আগামী ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ; ২ মার্চ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত; এর পর এপ্রিল থেকে আবারও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা করা শুরু করবে ইসি। সেই তালিকার কাজ শেষ না হলেও সংসদ নির্বাচন করতে কোনো সমস্যা হবে না নির্বাচন কমিশনের। ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার পরিকল্পনা দ্রুত নেবে কমিশন। রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) কাছে কাগজ চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। সংসদ নির্বাচন ছাড়া উপজেলা-সিটি নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য তিন রঙের কাগজ প্রয়োজন হয়। সাধারণত হলুদ, নীল ও গোলাপি রঙের কাগজ দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। অন্যদিকে, নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজ কেনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার কার্যক্রমও শুরু হবে রোডম্যাপ চূড়ান্ত হলে। নির্বাচনি মালামালের মধ্যেÑ ব্যালট পেপারের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, আমকাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি রয়েছে। ইসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হচ্ছেÑ অমোচনীয় কালির কলম, ব্যালট বাক্সের সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, রেড সিলিং ওয়াক্স, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল ও ব্রাশ সিল।