শিশু ইরতিজা আরিজ হাসানের চোখে ‘অস্ত্রোপচার নয়, চোখের পাতার নিচ থেকে পাপড়ি সরানো হয়েছে’ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় শিশুর বাবা মাহমুদ হাসান গত বুধবার ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই দিন দিবাগত রাত ২টায় ওই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অবশ্য গতকাল সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সাহেদ আরা বেগমকে জামিন দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
গত মঙ্গলবার চোখে ময়লা জাতীয় কোনো বস্তুর অস্তিত্ব টের পেয়ে ওই হাসপাতালে শিশু আরিজ হাসানের চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন তার বাবা-মা।
কিন্তু আরিজ হাসানের বাম চোখের বদলে ডান চোখের চিকিৎসা করেন চিকিৎসক। পরিবার অভিযোগ জানালে পরবর্তীতে দুঃখ প্রকাশ করে আবারও বাম চোখের ময়লা বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শিশুর বাবা মাহমুদ হাসান গত বুধবার ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেন। ওই দিন দিবাগত রাত ২টায় ওই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অবশ্য গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা রহমানের আদালত শুনানি শেষে তার জামিনের আদেশ দেন।
এদিকে, গতকাল বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটের পক্ষে চিফ অপারেটিং অফিসার কাজী মেজবাহুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ঘটনার পর জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের নির্বাহী কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে, গত ১৪ জানুয়ারি ইরতিজা আরিজ হাসান নামে ১৮ মাস বয়সি এক শিশু রোগীকে চোখের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটে শিশু চক্ষু বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সাহেদ-আরা বেগমের কাছে আনা হয়। তিনি শিশুটির চোখের পাতার নিচে ফরেন বডির (চোখের পাপড়ি) অস্তিত্ব খুঁজে পান, যা চোখের কর্নিয়ার ক্ষতির কারণ হতে পারে তাই তা বের করে আনার পরামর্শ দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চিকিৎসাটি কোনো অস্ত্রোপচার ছিল না। ছোট শিশু বিধায় সামান্য ঘুমের ওষুধ দিয়ে চোখের পাতার নিচ থেকে ওই ফরেন বডিটি সরানো হয়েছে। চোখের উপরিভাগের ঘর্ষণজনিত সমস্যা হতে দ্রুত নিরাময়ের জন্য ওই শিশুটির চোখ ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়। এটি এ ধরনের চিকিৎসার স্বীকৃত ও প্রচলিত পদ্ধতি।
পরবর্তী চিকিৎসা ব্যবস্থা যথাযথ অনুসরণ করা হলে শিশুটির চোখের কোনো দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী সমস্যা হবে না। শিশুটির সঙ্গে থাকা মা-বাবাকে পরবর্তী চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোপুরি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর মা-বাবা এবং আত্মীয়স্বজন চিকিৎসা প্রক্রিয়ার পুরো অংশটি বুঝতে ভুল করেন। ফলে তারা বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটের পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে যা যা বলেছেন তা ভিত্তিহীন এবং অপপ্রচারের শামিল।
এদিকে, জামিন পেয়ে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন ডা. সাহেদ আরা বেগম। গতকাল ঢাকার ওই আদালত জামিন দিলে তাকে সেখান থেকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। তখন ওই চিকিৎসকের সঙ্গে থাকা তার (ডা. শাহেদ আরা) প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সাংবাদিকদের নানা কটূক্তিও করেন। কেউ বলেন ভুয়া, ভুয়া। আবার কেউ বলেন মিডিয়া ব্যবসায়ী। তারা সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের ছবি তোলেন ও ভিডিও করে নিয়ে যান।