বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অতি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠাই একমাত্র পথ। এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া উচিত, যেন আর কোনো অস্পষ্টতা না থাকে। গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকেছিলেন, আমরা আলোচনা করেছি। আমরা পূর্বে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব-সেটাই তাঁকে আবার জানিয়েছি। একই সঙ্গে নির্বাচনপ্রক্রিয়া দ্রুত করার ওপর জোর দিয়েছি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতি প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন, সেটা তিনি বাস্তবায়ন করবেন-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া উচিত, যেন আর কোনো অস্পষ্টতা না থাকে। আমরা তাঁকে অনুরোধ করেছি, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবস্থা নেবেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা চাই, দ্রুত নির্বাচন হোক এবং একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা পাক। রাজনৈতিক সরকার না থাকলে যে সমস্যাগুলো আরও বৃদ্ধি পায়, সেটা তাঁকে (প্রধান উপদেষ্টাকে) বলেছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সোমবার একটি বিমান দুর্ঘটনায় অনেক কচি প্রাণ ঝরে গেছে। ওই দুর্ঘটনার সূত্র ধরে মাইলস্টোন স্কুলে দুই উপদেষ্টা ও প্রেস সচিবকে শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করে রাখে এবং সচিবালয়ে পরীক্ষাসংক্রান্ত জটিলতায় শিক্ষার্থীরা ভিতরে ঢুকে পড়েন। এটা একটা প্রশাসনিক জটিলতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে, যা সবাই দেখেছেন। তিনি বলেন, এর কয়েক দিন আগেই গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শক্তি ‘রেইন অব টেরর’ সৃষ্টি করেছিল। ঘটনাটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। এটি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সচিবালয়ে যারা প্রবেশ করেছিল, তাদের মধ্যে ফ্যাসিস্টদের লোক ছিল বলেই আমরা মনে করি। তবে জনগণ এসব চক্রান্ত প্রতিহত করবে, আমাদের এই বিশ্বাস রয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঐক্য অটুট আছে। ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে যারা সংগ্রাম করেছে, তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্যই প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ডেকেছিলেন। আমরা তাঁকে বলেছি, সরকারের প্রতি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। মিডিয়ায় অনেক সময় রাজনীতিকদের মধ্যে কথার লড়াই দেখা যায়। এগুলো রাজনীতিরই অংশ। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কথার ব্যবহার থাকবে। এটাই রাজনীতির সৌন্দর্য। গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দিতে হবে, সবার কথা বলার সুযোগ থাকতে হবে।
উত্তরায় স্কুলের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সরকারের পদক্ষেপগুলো কি সঠিক ছিল-এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কিছু কিছু জায়গায় হয়তো তাদের অভিজ্ঞতার কারণে কিছু ঘাটতি ছিল। সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা তাদের অভিজ্ঞতা-অনভিজ্ঞ লোকেরাই বেশি আছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতার অভাব আছে। এর আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের সভাপতি মৃগেন হাগিদের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার।