রাজনীতিতে কোনো চিরস্থায়ী শত্রুমিত্র নেই। রাজনীতির ডিকশনারিতে একটি শব্দ অনুপস্থিত, তা হলো ‘বিশ্বাস’। পাঠ্যবইয়ের এই বহুলপ্রচলিত বাণীর বাস্তব প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে এখন বাংলাদেশে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাচনের সময় যতই এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তা। রাজনৈতিক দলগুলো কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। একে অন্যকে শত্রু ভাবছে। কে কাকে কীভাবে পরাস্ত করবে, সেটাই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে। জনগণের কথা ভাবছে কজন? আওয়ামী লীগের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় গত বছরের ৮ আগস্ট। সে সময় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য এবং সৌহার্দের সম্পর্ক ছিল তা যেন এখন স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি। রাজনীতিতে আবার সেই পুরোনো সংস্কৃতি ফিরে এসেছে। যে কোনো প্রকারে ক্ষমতা দখলের মানসিকতা দেখা যাচ্ছে কোনো কোনো দলের মধ্যে। দেশের স্বার্থের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে দলের স্বার্থ।
নানান আলোচনা ও জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৪টি দল তাতে স্বাক্ষর করেছে। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো বলে জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পরও দলগুলোয় মতভিন্নতা কাটেনি। পরিস্থিতি দেখে তার উল্টো মনে করা হচ্ছে।
একদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলগুলো। আবার দলগুলোর শীর্ষ নেতারা যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাঁদের আশঙ্কার কথাও তুলে ধরছেন। শুধু তাই নয়, দলগুলো যার যার দাবিদাওয়া নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পথে হাঁটছে। সম্প্রতি নানান ইস্যুতে তাদের মধ্যে মতের অমিল দেখা যাচ্ছে। জামায়াতসহ সাতটি দল কর্মসূচি পালন করছে। এরই মধ্যে মঙ্গল ও বুধবার দুই দিনে তিনটি দলের শীর্ষ নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে নিজেদের দাবি ও অবস্থান তুলে ধরেছেন। এতে স্পষ্ট হয় যে দলগুলো এখনো এক ছাতার নিচে আসতে পারেনি। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে কাজ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে। সরকারের ভিতরে বিভিন্ন দলের অনুগত উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি করেছে বিএনপি। জামায়াতও সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা প্রশাসনে বিএনপি ও এনসিপির প্রতি সহানুভূতিশীল উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি করেছে। জামায়াত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট এবং জুলাই সনদের আইনি বৈধতা দিতে বলেছে সরকারকে। জামায়াত বলছে, দাবি না মানলে তারা নির্বাচনে যাবে না এবং তারা আশা করে সরকার জনগণের দাবি মেনে নেবে। অন্যদিকে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, শাপলা প্রতীক না দিলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। অন্যদিকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট কারা হবেন কিংবা নির্বাচন পরিচালনা কীভাবে হবে, সেসব বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দলগুলোর এমন কঠোর অবস্থান জাতীয় সংসদ নির্বাচন আরও জটিল করে তুলছে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত এবং এনসিপি দলের সুবিধার জন্য নির্বাচন পেছাতে চাইছে। এ মুহূর্তে নিঃসন্দেহে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপি। দেশজুড়ে দলটির সংগঠন বিস্তৃত। সঠিক এবং যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিলে, দলীয় কোন্দল নিয়ন্ত্রণ করলে এবং ঢালাওভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী না দাঁড়ালে আগামী নির্বাচনে বিএনপির হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিএনপির এ সুবিধার কথা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ভালো করেই জানে। এজন্যই নির্বাচন অনিশ্চিত করে তোলার চেষ্টা চলছে বলে কোনো কোনো মহল মনে করে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদী। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়ে বলছেন, ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ‘নিশ্চিত থাকতে’ বলেছেন তিনি। তার পরও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে, দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য স্পষ্ট হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির বৈঠক রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এ তিন দলের অভিযোগের ধরন এবং অবস্থান বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে তারা শুধু সরকারের ওপর নয়, পরস্পরের বিরুদ্ধেও চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে। নির্বাচনের আগে প্রশাসনিক প্রভাবের প্রশ্নে এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা এখানে দৃশ্যমান। রাজনৈতিক দলগুলোর এ পারস্পরিক অবিশ্বাস আর টানাপোড়েন একটি কথা স্পষ্ট করেছে, তা হলো রাজনীতিতে চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব বলে কিছু নেই।
দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব পুরোনো খবর। সম্প্রতি এনসিপি-জামায়াতের প্রকাশ্য কথার লড়াই রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এনসিপিকে অনেকেই জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠা সংগঠন মনে করতেন। বিশেষ করে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে জামায়াতের কর্মীরাই বেশি উপস্থিত ছিলেন। জামায়াত-শিবিরের কারণেই ওই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিল। জামায়াত এবং শিবিরের সমাবেশে এনসিপি নেতাদের সরব উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। বিশেষ করে জামায়াতের সমাবেশে দলটির আমির অসুস্থ হলে এনসিপি নেতা সারজিস আলমের মোনাজাত ধরার দৃশ্য দল দুটির আবেগময় নৈকট্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। সেই সম্পর্কে ফাটল ধরল কেন? কেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করলেন? রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে প্রতারিত হয়েই এনসিপি জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার ব্যাপারে এনসিপি ও জামায়াত অভিন্ন অবস্থানে ছিল। দুই দলের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল যে জুলাই সনদের সুস্পষ্ট আইনি ভিত্তি ছাড়া তারা এ সনদে স্বাক্ষর করবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জামায়াত এনসিপির সঙ্গে থাকেনি। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠান পূর্ণতা দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, জামায়াত যদি সেদিনের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকত তাহলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রশ্নবিদ্ধ হতো। এনসিপি নেতারা মনে করেন, জামায়াত কথা রাখলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে সরকার বাধ্য হতো।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে জামায়াত রাজনীতিতে নিজেদের স্বার্থে যখন যাকে দরকার তখন তাকে ব্যবহার করেছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের করুণায় জামায়াত বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। বিএনপির ছায়ায় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে দলটি সংগঠন গোছায়। আবার ১৯৯১-এর পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। ’৯৬-এর নির্বাচনে বিপর্যস্ত জামায়াত আবার বিএনপির সঙ্গে জোট করে অস্তিত্ব রক্ষা করে। ২০০১ সালে ক্ষমতার অংশীদার হলেও এক-এগারোর সময় বিএনপির পাশে দাঁড়ায়নি। মাইনাস টু ফর্মুলার বিষয়েও জামায়াতের ভূমিকা ছিল রহস্যময়। ২০০৮-এর নির্বাচনে মহাবিপর্যয়ের পর বিএনপির হাত ধরেই জামায়াত অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে জামায়াতের গোপন সম্পর্ক নিয়েও আছে নানান গুঞ্জন। বিশেষ করে ২০২৪-এর আমি-ডামি নির্বাচনের আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হলেও জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের রহস্যজনক সহানুভূতি গবেষণার দাবি রাখে। রাজনীতিতে আদর্শের কথা বললেও দলের স্বার্থে আদর্শ জলাঞ্জলি দিতেও কার্পণ্য করেনি জামায়াত। ছাত্রশিবিরের ছাত্রলীগে বেড়ে ওঠা তার একটি উদাহরণ মাত্র। জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মাধ্যমে জামায়াত তাদের ছাত্র সংগঠন সংগঠিত করেছে। এখন আবার সেই আন্দোলনের নেতাদের অস্বীকার করতেও জামায়াতের কোনো দ্বিধা নেই। জামায়াতের রাজনীতির এ দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরার কারণ দলটিকে ছোট করা নয় বা তাদের সমালোচনা নয়। আগামী নির্বাচনে জামায়াতের কৌশল বিশ্লেষণ করতে হলে জামায়াতের অতীত কৌশল জানা প্রয়োজন। জামায়াত মনে করছে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে তারা এখন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করার এটাই তারা উপযুক্ত সময় মনে করছে। এজন্যই তারা বেশ কিছু কাজ করছে। কিছু প্রকাশ্যে কিছু গোপনে। জামায়াত জানে সাধারণ ভোটাররা এখনো তাদের পছন্দ করে না। সুইং ভোট তাদের পক্ষে খুব একটা যাবে না। এর প্রধান কারণ ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা। এজন্যই জামায়াতের আমির নিউইয়র্কে গিয়ে বলেছেন, ‘একাত্তরের ভূমিকার জন্যই শুধু নয়, সাতচল্লিশ থেকে আজ পর্যন্ত যদি কোনো ভুল করে থাকি, তাহলে তার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চাই। আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’ কিন্তু জামায়াত আমিরের এ কৌশলী ক্ষমা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করবে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন আছে।
জামায়াতের কৌশলের দ্বিতীয় দিক হলো, বিএনপিকে একলা করা। এ কারণেই জামায়াত ইসলাম-পছন্দ দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে। এ দলগুলো যেন বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে না পারে সেজন্যই জামায়াতের এ উদ্যোগ। সম্প্রতি নির্বাচনসংক্রান্ত আইন সংশোধনে জামায়াতের কৌশল জয়ী হয়েছে। এ সংশোধনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ নির্বাচন করলেও তাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ মাহমুদুর রহমান মান্না, আন্দালিব রহমান পার্থর মতো বিএনপির জোটসঙ্গীরা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। এর ফলে জোটবদ্ধ নির্বাচন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। শুক্রবার বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ এ সংশোধনের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আরপিও সংশোধনের বেশ কিছু ধারায় আমরা সম্মত ছিলাম। তবে ২০(১) উপধারা অনুযায়ী জোটভুক্ত হলে রাজনৈতিক দলগুলো অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারত, এ ধারার পরিবর্তনে অধিকাংশ দলই সম্মত ছিল। আমরা আশ্বস্ত ছিলাম, কিন্তু যেভাবে আরপিও পাস হলো, তাতে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না। এতে ছোট দলের বড় নেতারা সুযোগ হারাবেন।’
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘এটি একতরফাভাবে কেন পাস করা হলো? বিএনপি বহুদলসমৃদ্ধ সংসদ দেখতে চায়। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাই।’
এ রকম অনেক কিছুই জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল সরকারি কর্মকর্তারা করছেন নীরবে নিভৃতে। জামায়াত পিআর এবং নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি তুলেছে দুই কারণে। প্রথমত এ দাবিতে আন্দোলন করে যদি নির্বাচন কিছুদিনের জন্য পেছানো যায় তাহলে তা হবে বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের মনস্তাত্ত্বিক বিজয়। তা ছাড়া নির্বাচন যত পেছাবে ততই বিএনপির ক্ষতি হবে। এ সরল সমীকরণে জামায়াত নির্বাচন পেছানোর জন্য নিত্যনতুন দাবি সামনে আনছে। জামায়াতের আরেকটি কৌশলও এখন বিশ্লেষকদের কাছে পরিষ্কার হচ্ছে, তা হলো নির্বাচন নিয়ে যত অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক তৈরি করা যাবে ততই সাধারণ ভোটারের আগ্রহ ও উপস্থিতি কমে যাবে। ভোটার উপস্থিতি কম মানেই সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে যাবেন না। এতে ক্ষতি হবে বিএনপির। কারণ সাধারণ ভোটাররাই বিএনপির বড় শক্তি। জামায়াতের হিসাব খুবই পরিষ্কার, সারা দেশের ভোট কেন্দ্রে যদি ২০ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি ভোটার না আসে, আর জামায়াত যদি তাদের সব কর্মী ও সমর্থককে কেন্দ্রে আনতে পারে তাহলে তারা বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঘটন ঘটাতে পারবে। কিন্তু সমস্যা হলো, যে কৌশল সবাই জেনে যায়, তা আর কার্যকর হয় না। জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশল শেষ পর্যন্ত সফল হবে কি না সময়ই বলে দেবে।
সদ্যগঠিত এনসিপি এখন জাতীয় রাজনীতিতে এবং নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর নয়। ১৭ অক্টোবর তাদের জন্য যেমন জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বন্ধ হয়নি, নির্বাচনও তাদের কারণে থেমে থাকবে না। দলটির ভিতরে নানা রকম কোন্দল ও দ্বন্দ্ব চলছে।
বিএনপির জন্য এ নির্বাচন বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের। দেশের বৃহত্তম দল হিসেবে শুধু নির্বাচনে জয়ী হওয়া বিএনপির লক্ষ্য নয়। নির্বাচন যেন বিতর্কমুক্ত, অবাধ এবং সুষ্ঠু হয় তার একটা বড় দায়িত্বও রয়েছে বিএনপির। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যে কোনো ত্রুটিবিচ্যুতির দায় বিএনপির ঘাড়ে আসবেই।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে আগামী নির্বাচনে ঘর সামলানোই বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় বিএনপির যোগ্য প্রার্থী এক ডজনের কম নয়। এর মধ্যে একজনকে বাছাই করে, তার পক্ষে বাকিদের ঐক্যবদ্ধ করাটাই বিএনপির প্রধান নির্বাচনি চ্যালেঞ্জ। এ কাজটি যত দক্ষতার সঙ্গে তারা করতে পারবে, নির্বাচনে ততই ভালো ফল করবে।
বিএনপির দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। আগামী নির্বাচন যত উৎসবমুখর এবং শান্তিপূর্ণ হবে, বিএনপির সম্ভাবনা ততই বাড়বে।
এসবই হলো রাজনৈতিক কৌশল ও সমীকরণের হিসাব। কিন্তু দলগুলোর বিভক্তি এবং অবিশ্বাস নির্বাচন যদি অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে গণতন্ত্রের সর্বনাশ অনিবার্য হয়ে উঠবে।