মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিনটি মামলার আসামি ২৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন এখনো সার্ভিংয়ে বা কর্মরত বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই প্রসিকিউটর এ তথ্য জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, যা আইনে বলা আছে সেটাই আইনের ব্যাখ্যা। এখন সেনা সদরদপ্তর সিদ্ধান্ত নেবে যে, এই আইন কবে তাঁদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবে। যতক্ষণ প্রয়োগ না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত তো সার্ভিং (কর্মরত) বলাই যেতে পারে।
এদিন তিনটি পৃথক মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের দিন বদলিয়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে গুমন্ডনির্যাতনের দুটি মামলার পরবর্তী তারিখ ২০ নভেম্বর এর স্থলে ২৩ নভেম্বর এবং জুলাই আগস্টে রামপুরায় সংঘঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৫ নভেম্বর থেকে পরবর্তী তারিখ ২৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এই দিন ধার্য করেন। পরে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী তামীম বলেন, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই মামলাগুলোর পরবর্তী তারিখ পরিবর্তনের আবেদন করা হয়েছিল। প্রসিকিউশনের নিজস্ব জটিলতার (ডিফিকাল্টি) কারণে এই সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল আবেদন গ্রহণ করে নতুন তারিখ দিয়েছেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত গুমন্ডখুনের ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দিয়েছেন।
এ মামলার ১১ জন আসামির মধ্যে চার আসামির নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ এবং এনটিএমসির সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান। বাকি আসামিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এ মামলায় গতকাল মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
চাচাকে গুলির বর্ণনা দিলেন সাক্ষী : জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আরও একজনের জবানবন্দি শেষ হয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এ মামলায় প্রসিকিউশনের ২০তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন নিহত ইয়াকুবের ভাতিজা আবদুস সালাম। এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী রবিবার দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট চাচার সঙ্গে আমিও আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। চানখাঁরপুলে মামুন বিরিয়ানির সামনে চাচাকে গুলি করে পুলিশ। তখন চাচার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল।
আমি ওই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেছিলাম। পরে তদন্ত কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে সেই ভিডিওসহ মোবাইল জব্দ করেছিলেন।
গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে আনাস, মোস্তাকিম, ইয়াকুব, ইসমামুলসহ কয়েকজন নিহত হন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ৬ মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ২০ এপ্রিল চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় সংস্থাটি। এটিই ছিল জুলাই-আগস্টের গণ আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। এ মামলায় ৭৯ জনকে সাক্ষী করেছে প্রসিকিউশন। গত ১৪ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় এখনো পর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।