২১ মে, ২০২৪ ১৪:১৫

কানপাকা ও কান খোঁচানো নিয়ে কিছু কথা

অধ্যাপক ডা. মণিলাল আইচ লিটু

কানপাকা ও কান খোঁচানো নিয়ে কিছু কথা

কানপাকা মজিদকে অনেকেরই মনে পড়ে। মনে পড়বে একটি টিভি সিরিয়ালের কারণে। রোগটি সম্পর্কে সাধারণ ধারণাটি মোটেও ঠুনকো কিছু নয়। কান থেকে পানি-পুঁজ পড়ার অভিযোগ থাকে। আর থাকে কানে কম শোনার অভিযোগ। রোগটি চলতে থাকে মাস-বছর ধরে। এভাবে গোঁফ দেখে বিড়াল চেনার মতো কানপাকা রোগ চেনা যায়। কানপাকা রোগ হচ্ছে মধ্যকর্ণের প্রদাহ। কানের ডাক্তাররা বলবেন, তারা রোগটিকে চেনেন কানের পর্দার অবস্থা দেখে। 

কান পাকলে কানের পর্দায় একটা স্থায়ী অসামঞ্জস্য তৈরি হয়, খুব সম্ভবত ইতিপূর্বে সংঘটিত মধ্যকর্ণের আকস্মিক প্রদাহের কারণে। অথবা মধ্যকর্ণের ঋণাত্মক বায়ুচাপের কারণে। অথবা সেখানে পানি জমে থাকার কারণে। তারা এ রোগকে ডাকেন সিওএম অর্থাৎ ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়া। জনসমাজে রোগটির ব্যাপকতা কেমন? সক্রিয় এবং অপেক্ষাকৃত নিরুপদ্রব এ দুই ধরনের মিলিয়ে ৪.১ শতাংশ লোক এ রোগে ভোগে। এর মধ্যে ৩.১ শতাংশ রোগীর দুই কানে এবং অন্যদের এক কানে রোগটি দেখা যায়। বাংলাদেশে এই হার ৫-৬ শতাংশ। ১৮ থেকে ৪০ বছরের তুলনায় ৪১ থেকে ৮০ বছর বয়সীদের আক্রান্তের ঝুঁকি দ্বিগুণ। নিম্নশ্রেণির মানুষের সিওএমের ব্যাপকতা বেশি।

সিওএম কাদের হয়
মূলত বংশগত ও জাতিগত কারণে সিওএম হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আলাস্কার আদিবাসীরা বেশি আক্রান্ত হয়। আবার একই দেশের আদিবাসীদের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে তারতম্যও দেখা যায়। উন্নয়নশীল দেশে রোগটির হার বেশি হলেও একেক দেশে একেক রকম। কোন জীবাণু দায়ী : প্রোটিয়াস, সিউডোমনাস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস, কোলিফর্ম ব্যাসিলাই, কোরিন ব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরি, স্ট্রেপটোকক্কাস ফিকালিস ইত্যাদি দায়ী।

কান খোঁচানো ঠিক নয়
কান শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর যত্ন খুবই জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কান পরিষ্কারের সবচেয়ে ভালো সময় গোসলের পর। তখন কান একটু ভেজা ভেজা থাকে। এতে ময়লা সহজে বেরিয়ে আসে। তবে প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে একদিন পরিষ্কার করতে পারেন। কোনো সমস্যা না থাকলেও ছয় মাসে অন্তত একবার নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। এতে আপনার কানের কী অবস্থা সে বিষয়ে জানতে পারবেন। সমস্যা থাকলে জটিলতা এড়াতে প্রাথমিক অবস্থাতেই এর চিকিৎসা করিয়ে নিতে পারবেন। 

তেলের ব্যবহার 
রাতে শোয়ার আগে কয়েক ফোঁটা তেল দিতে পারেন। এতে ময়লাগুলো নরম হয়ে যাবে। তখন ময়লা বেরিয়ে আসতে সুবিধা হবে।

কান খোঁচানো নয়
অনেকে হাতের কাছে যা পায় তা দিয়েই খোঁচানো শুরু করে। পেনসিল, ক্লিপ ব্যবহার করতে থাকে। যদি কানে কিছু ব্যবহার করতেই হয়, তবে কটন বাড ব্যবহার করুন। তবে সেটি একটু তেল দিয়ে ভিজিয়ে ব্যবহার করবেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত, কানের ময়লা এমনিতেই বেরিয়ে আসে। ঘন ঘন কটন বাডের ব্যবহারও ঠিক নয়।

পরামর্শ 
খুব বেশি ভিতরের দিকে ঢুকাবেন না। এতে কানে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। পরিষ্কারের সময় সতর্ক এবং আলতোভাবে কাজটি করতে হবে। এ ছাড়া হেডফোন শেয়ার না করা শ্রেয়। অন্যের কানেও তো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকতেই পারে! হেডফোনের সঙ্গে সেই ব্যাকটেরিয়াও শেয়ার হতে পারে। তাই সচেতন হতে হবে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশ।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর