কাশ্মীর উপত্যকায় প্রায়ই আগুন লাগছে স্কুলগুলোতে। শনি ও রবিবার দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় দু’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই গেছে। শনিবার রাতে আগুন লাগানো হয় অনন্তনাগ জেলার জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে। রবিবার সকালে আগুন লাগে অনন্তনাগের কাবা মার্গে গভর্নমেন্ট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল। খবর আনন্দবাজারের।
স্কুলে আগুন নেভাতে পৌঁছেছিল দমকল। ছুটে গিয়েছিলেন স্থানীয় মানুষও। তবে বাঁচানো যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে। বইপত্র, খাতাকলম, নথিপত্র সব কিছু জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ নিয়ে দক্ষিণ কাশ্মীরে স্কুলে আগুন লাগার ঘটনার সংখ্যা দাঁড়াল ২৫। এসব ঘটনাকে 'রহস্যজনক' বলে উল্লেখ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
পাকিস্তান-আফগানিস্তানেও শিক্ষাঙ্গনে হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। নারী শিক্ষার বিরোধী হিসেবে পরিচিত তালিবানি জঙ্গিরা। তালিবান মাঝেমধ্যেই উড়িয়ে দেয় সেই সব এলাকার স্কুল। তবে কাশ্মীরে এর ছায়া উদ্বিগ্ন করে তুলছে কেন্দ্র ও উপত্যকার স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে। অনেকেই মনে করছেন, একটা প্রজন্ম যাতে স্কুলের চৌহদ্দির বাইরে থাকে, তার জন্যই যাবতীয় চেষ্টা চলছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, এটা সম্পূর্ণভাবেই পাকিস্তানের চক্রান্ত। একটা প্রজন্মকে শিক্ষাঙ্গনের বাইরে রেখে দিতে পারলে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা কঠিন। কিন্তু হাতে বন্দুক তুলে দেয়া যেতে পারে সহজেই। সেই ষড়যন্ত্রই চলছে কাশ্মীর উপত্যকায়।
রাতেই হামলাগুলি চালানো হচ্ছে। বাদ পড়ছে না বেসরকারি স্কুলও। জুলাইয়ের শুরুতে হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকেই ১১২ দিন ধরে বন্ধ উপত্যকার সমস্ত স্কুল-কলেজ। গত মাসে স্কুল খোলার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী নইম আখতার। হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানিকে খোলা চিঠি লিখে শিক্ষাকে অশান্তির বাইরে রাখতে অনুরোধ করেন।
লস্করের মুখপাত্র আবদুল্লা গজনভি শিক্ষামন্ত্রীকে হুমকি দিয়ে বলেন, কাশ্মীরের মানুষ যথেষ্ট শিক্ষিত হয়ে গিয়েছে। কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ, তারা খুব ভালই জানেন। এভাবে জোর করে উপত্যকায় স্কুল খুলতে চাইলে তার ফল ভুগতে হবে মন্ত্রীকে।
এর পরে ঘটে চলেছে একের পর এক স্কুল পোড়ানোর ঘটনা। তবে শীর্ষস্থানীয় হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি স্কুল পোড়ানোর ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, শিক্ষাঙ্গনে আগুন জ্বালিয়েছে যারা, তারা কাশ্মীরের শত্রু।
কাশ্মীরে প্রায় চার মাস ধরে স্কুল বন্ধ। অর্ধেকেরও বেশি সিলেবাস শেষ হয়নি। আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে ১০ম ও ১৪ তারিখ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এর মধ্যেই শ্রীনগর, অনন্তনাগ, বান্দিপোরা, বদগাম, বারামুলা, কুলগাম, সোপিয়ান, পুলওয়ামা, অনন্তনাগের স্কুলগুলোতে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে।
বিডি প্রতিদিন/৩১ অক্টোবর, ২০১৬/ফারজানা-০২