মহাত্মা গান্ধী লাঠি হাতে করে আগে আগে দৌড়াচ্ছে শিশু ছেলেটি। বিখ্যাত ডান্ডি অভিযানের এ ছবি প্রায় সকলের চোখে ভাসছে। কিন্তু সেদিনের ছোট ছেলেটির এখন যা অবস্থা, তা চোখে দেখা যায় না প্রায়। তিনি গান্ধীজির নাতি কানু রামদাস গান্ধী। বর্তমানে প্রায় সহায়সম্বলহীন এই বৃদ্ধের চিকিৎসা চলছে এক মন্দিরের অর্থাসাহায্যে। খবর সংবাদ প্রতিদিনের।
এই মুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গেই পাঞ্জা লড়ছেন গান্ধীজির উত্তরসূরি। সঞ্চিত অর্থ বলতে প্রায় আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ভারতের সুরাটের এক দাতব্য চিকিসালয়ে ভর্তি তিনি। পরিজন বলতেও বিশেষ কেউ নেই। নেই কোনও অনুরাগী বা গুণগ্রাহীর ভিড়ও। স্ত্রীও পেরিয়েছেন নব্বইয়ের কোঠা। তিনিও অসুস্থ ও মন্দির কর্তৃপক্ষর দেখভালেই দিন কাটছে তার। পাশে আছেন বলতে পুরনো বন্ধু ধীমন্ত বাধিয়া। তিনিই সাধ্যমতো অর্থসাহায্য করেছেন। এছাড়া এক দিদি আছে কানু রামদাসের। তিনিও এসে দেখা করে যান। চিকিৎসার ব্যয়ও বহন করতে চেয়েছিলেন। যদিও মন্দির কর্তৃপক্ষ তা নিতে রাজি হয়নি। জাতির জনকের ঋণ তারা এভাবেই শোধ করতে চায় বলেই জানিয়েছে।
তবে এরকম জীবন ছিল না কানু রামদাসের। পেশায় তিনি ছিলেন নাসার বিজ্ঞানী। স্ত্রী ছিলেন ভিনদেশেরই এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরেও কাজ করেছেন এককালে। তবে শেষমেশ প্রবাসী জীবন ছেড়ে দু'জনেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। দেশে তাদের থাকার কোনও জায়গা ছিল না। ঘুরে ঘুরে এখানে ওখানে থাকতেন। সুরাটে আসার পর সে ভবঘুরে জীবনে ইতি পড়ে। পরপর স্ট্রোক হওয়ার কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান তিনি। স্ত্রীও বার্ধক্যজনিত অসুখে কাবু। তারপর তার দেখভালের দায়িত্ব নেয় সুরাতের রাধাকৃষ্ণ মন্দির কর্তৃপক্ষ।
দেশে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন কানু রামদাস। প্রধানমন্ত্রী তাকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। যদিও গুজরাট সরকারের তরফে এখনও কোনও সাহায্য পৌঁছায়নি বলেই জানাচ্ছেন বন্ধু বাধিয়া। এমনকী সবরমতী আশ্রম কর্তৃপক্ষর উপরও বেশ ক্ষুব্ধ তিনি। জানাচ্ছেন, গান্ধীজির নাম করে এত টাকা খরচ করা হয়, আর তার বংশধরের চিকিৎসার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না।
বর্তমানে কোমায় আছন্ন গান্ধীজির এই বংশধর। লাইফ সাপোর্টে টিমটিম করে জ্বলছে জীবনদীপ। বাপুজির সঙ্গে যার ছবি দেশের জাতীয় সম্পদ প্রায়, সকলের অগোচরেই তিনি এখন মৃত্যপথযাত্রী।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৬ নভেম্বর ২০১৬/ সালাহ উদ্দীন