ক্রমশ বাড়ছে বিশ্বের তাপমাত্রা৷ তার রেশ পড়েছে সুমেরুতেও৷ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জমাট বাঁধছে না সমুদ্রের বরফ৷ নতুন গবেষণা আরও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে৷ রিপোর্ট বলছে, বাড়তে থাকা তাপমাত্রা প্রভাব ফেলছে পরিবেশের ওপর৷ এর জের পৌঁছতে পারে এশিয়া পর্যন্তও৷ যাতে করে এই মহাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণে হেরফের হতে পারে৷ খবর এই সময়ের।
সুমেরু অঞ্চলে অক্টোবর-নভেম্বরে যে তাপমাত্রা থাকার কথা, তার থেকে পারদ চড়েছে অনেক বেশি৷ স্বাভাবিকের তুলনায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে রয়েছে তাপমাত্রা৷ এর জেরে সমুদ্রের উপর বরফের বিস্তার কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে৷ অন্যান্য বছরের থেকে অনেক কম৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের এই ভয়াবহ ছবিটা উঠে আসার পর আর এক রিপোর্ট নতুন উদ্বেগ সামনে আনল৷
এবার এক ধাপ এগিয়ে গবেষকরা বলছেন, তাপমাত্রার বাড়ার প্রভাব পড়তে পারে পরিবেশের ওপর৷ ১১টি সংস্থা সুমেরুর উপর গবেষণা চালিয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে আর্কটিক কাউন্সিল ও ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়৷ কী বলছে তারা? শুক্রবার প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিথেন গ্যাসের নির্গমন বেড়েছে৷ তাতে উত্তপ্ত হচ্ছে প্রকৃতি৷ এরই জের পড়ছে সমুদ্রে৷ তার ফলে বরফের বিস্তার শুধু কমছে না, জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে দীর্ঘ মেয়াদে৷ সুমেরু কাছাকাছি যারা বাস করেন, তাদের জীবনযাত্রা এই পরিবর্তনের ফলে প্রভাবিত হতে পারে৷ সুমেরু ও তার নিকটবর্তী এলাকায় কেবল নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের রেশ পৌঁছচ্ছে এশিয়াতেও৷
গবেষকদের মতে, সুমেরুর তাপমাত্রা বাড়ায় এশিয়ার বৃষ্টিপাতে প্রভাব পড়তে পারে৷ স্টকহোম পরিবেশ সংস্থার গবেষক মারকাস কারসনের ভাষায়, ‘পরিবেশ নিয়ে বিপদ সঙ্কেত ক্রমশ জোরালো হচ্ছে৷’ এই পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় পরিবেশবিদদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে৷ ট্রাম্প প্যারিসে জলবায়ু সংক্রান্ত সমঝোতাকে আমল দেননি ভোটের প্রচারে৷ তাই মরক্কোর জলবায়ু সম্মেলন থেকে ট্রাম্পের উদ্দেশে বার্তা দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জলবায়ু গবেষণার বাজেটে কাটছাঁট করতে পারেন৷ এ জন্য যে বিপুল টাকা বরাদ্দ হয় তা মহাকাশ বিজ্ঞানের গবেষণায় কাজে লাগানো হবে৷
এই ভাবনা পরিবেশবিদদের চিন্তা বাড়িয়েছে৷ কারসনের ভাষায়, ‘এটা মারাত্মক ভুল হবে৷ সুমেরুর আবহাওয়া পরিবর্তনের ব্যাপারে আরও ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন৷ তাতে বোঝা যাবে, বিপদটা ঠিক কোথায়৷ আবহাওয়ার পরিবর্তন কতটা ক্ষতি করবে, তা এখনও আমরা বুঝে উঠতে পারিনি৷
গবেষকের উদ্বেগ, ‘এমন সিদ্ধান্ত মাঝ-আকাশে ওড়ার সময় বিমান থেকে ককপিটের সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলার সামিল৷ কারণ জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণার অনেকটাই করে আমেরিকা৷’ সুমেরুর সমুদ্রের মাথায় থাকা বরফ জল ঠাণ্ডা রাখে, বাতাসের তাপমাত্রা কমায়৷ বরফের জন্য সূর্যরশ্মি সরাসরি জল স্পর্শ করে না৷ বরফে প্রতিফলিত হয়ে তাপ ফিরে যায় বাতাসে৷ এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বিশ্বের জলবায়ু ব্যবস্থার অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে৷ বরফ না জমায় তাপ সরাসরি শুষে নিচ্ছে সুমেরুর পানি৷ তাতেই বদল আসছে ব্যাপকভাবে৷ এ জন্য দায়ী অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়ন৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘মানব সভ্যতার বিকাশের কারণে সুমেরুর জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ তাই বিশ্বজুড়ে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন না কমালে এই ঝুঁকি বেড়েই যাবে৷ ’
বিডি-প্রতিদিন/২৭ নভেম্বর, ২০১৬/মাহবুব
