চলন্ত বাসে রাতের অন্ধকারে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন জ্যোতি সিং, যাঁকে আমরা ‘ব্রেভ গার্ল’ বা ‘নির্ভয়া’ নামেই জানি। চরম নরকীয় সেই ঘটনায় উদ্বেলিত হয়েছিল গোটা দেশ। আম আদমির বিক্ষোভে হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছিল নয়াদিল্লির বিজয় চক থেকে ইন্ডিয়া গেটে।
ভারতে চলন্ত বাসে নির্ভয়া গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল পুরো দেশে। এবার যা ঘটলো তা ধর্ষণ না হলেও কোন অংশে কম নয় বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। ব্যাগ চুরির অভিযোগে যাত্রী ভর্তি ট্রেনের কামরায় এক নাবালিকাকে নগ্ন করে নাজেহাল করা হলো। ঘটনাটি ঘটে হাওড়া-যোধপুর এক্সপ্রেসে।
ঘটনাটা ঠিক কী? হাওড়া-যোধপুর এক্সপ্রেসের এসি থ্রি-টিয়ার কামরায় আচমকাই যাত্রীরা আবিষ্কার করেন এক নাবালিকাকে। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নাবালিকার বিরুদ্ধে কয়েক জন যাত্রী অভিযোগ তোলেন সে নাকি ব্যাগ চুরি করেছে। নাবালিকার হাতে একটি ব্যাগও মেলে। এরপরই অভিযোগকারী এক নারী যাত্রী এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজন নাবালিকাকে বেধড়ক মারধর করে। ওই নারী যাত্রী নাবালিকার জামা-কাপড় খুলে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। এরপর এক পুরুষযাত্রী ব্লেড দিয়ে নাবালিকার মাথা ন্যাড়া করে দেয়।
চিৎকার চেঁচামেচি আর কান্নার আওয়াজ শুনে ছুটে আসেন টিটিই এস কে শর্মা। যাত্রীরা তাকেও চরম হেনস্থা করে এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ করেন টিটিই। ঘটনাটি যখন ঘটেছিল তখন হাওড়া-যোধপুর এক্সপ্রেস ফিরোজাবাদ ও তুন্দলা স্টেশন এলাকার মধ্যে ছিল।
আগ্রা ফোর্ট স্টেশনে নাবালিকাকে উদ্ধার করে জিআরপি-র হাতে তুলে দেন টিটিই শর্মা। অভিযোগকারী যাত্রীরা লিখিত বয়ানের ভিত্তিতে নাবালিকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। নিগৃহীত টিটিই এসকে শর্মা ৬ রেলযাত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ, জিআরপি নাবালিকার বয়স ১৯ উল্লেখ করে তাকে বুধবার আদালতে চালান করে দেয়।
এদিকে, নিখোঁজ মেয়ের খোঁজে রবিবার রাত থেকেই পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন নাবালিকা বাবা-মা। মঙ্গলবার তারা মেয়ের খোঁজ পান আগ্রা ফোর্ট স্টেশনের জিআরপি-র কাছ থেকে। তারা জিআরপি-র কাছে মেয়েটির নাবালিকা হওয়ার প্রমাণ পেশ করেন। স্কুল সার্টিফিকেটে নাবালিকার যে জন্ম-তারিখের উল্লেখ আছে তাতে তার বর্তমান বয়স ১৭ বছর ১০ মাস। কিন্তু, জিআরপি তাতে পাত্তা দেয়নি বলে অভিযোগ। নাবালিকার বাবা জানান, গত ১ বছর ধরে মেয়ের ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা চলছে। ব্রেন টিউমার হওয়ার পর থেকেই মেয়ে কিছুটা মানসিক-ভারসাম্যহীন। রবিবার সন্ধ্যায় মেলা দেখতে যাওয়ার জন্য বাবার কাছে ১০০ টাকা চায় নাবালিকা। দিনমজুর বাবা ১০০টাকা মেয়েকে দিতে পারেননি। এরপর থেকেই নাকি মেয়েকে আর খুঁজে পাচ্ছিলেন না তারা। আদালতে মেয়ের নাবালিকা হওয়া থেকে ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার কথাও নাকি বলেছেন বিচারককে। উত্তর প্রদেশের সাইফাই সরকারি হাসপাতালে নাবালিকার চিকিৎসার কাগজপত্রও নাকি বিচারককে দেখিয়েছিলেন বাবা-মা। কিন্তু, এরপরও জিআরপি-র বয়ানের ভিত্তিতে নাবালিকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ