কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন পৃথিবীর নরক বলে মন্তব্য করেছেন সেভ দ্যা চিল্ড্রেন কানাডার হিউম্যানেটোরিয়ান ম্যানেজার কাইল ডেগ্রো। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে নিজের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিতে গিয়ে কানাডার বৃহৎ এই উন্নয়ন সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সেখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই, আশ্রয় নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই। পুরো এলাকাটাই যেনো আবর্জনারস্তুপ। দুর্গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে আসা কক্সাবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো এখন পৃথিবীর নরক।
কাইল ডেগ্রো এখন রয়েছেন কক্সবাজারে, দিন রাত ছুটে বেড়াচ্ছেন রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। যতোটা সম্ভব সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়াই তার লক্ষ্য। আর সেই কাজটি করতে গিয়েই তিনি ভিন্নরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতাগুলোই তিনি লিখেছেন কানাডার প্রভাবশালী পত্রিকা টরন্টো স্টারে।
কাইল লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ- মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আমি যখন প্রথম পৌঁছি, তখনকার সেই অভিজ্ঞতা কোনো অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা যাবে না। রাস্তা বলতে কিছু নেই, বৃষ্টির পানি পরে, জমে কাদা আর পানিতে মিশে সে কি অবস্থা। এগুলোর উপর দিয়েই আমাদের হেঁটে হেঁটে যেতে হচ্ছে। মাত্রই পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে এই পাড়ে বাংলাদেশে এসে ঠাঁই নিয়েছে। এতোগুলো মানুষের কোনো আশ্রয় নেই, প্রাকৃতিক কাজ সারার মতো নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। খোলা জায়গায় যে যেখানে পারছে সেখানেই প্রাকৃতিক কাজ সেরে নিচ্ছে। কাদা পানির সাথে মিশে আর বাতাসে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়। এই অবস্থার মধ্যেই আমাদের ত্রাণ তৎপরতা চালাতে হয়েছে।
কাইল লিখেছেন, রোহিঙ্গারা আসছে, তাদের আশ্রয় নেই, পর্যাপ্ত খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই। কক্সবাজারে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গা ,তারা অসুস্থ, বৃষ্টির পানি থেকে নিজেদের বাঁচানোর কোনো ব্যবস্থাও নেই। যেনো এটাই পৃথিবীর নরক।
কাইল লিখেছেন, আমার সবচেয়ে চোখে পড়েছে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের। তাদের চোখে মুখে আতংক, সংশয়। তারা নিশ্চুপ, যেনো বোবা। কানাডায় সচারাচর যে ছেলেমেয়েদের আমরা দেখি, উৎফুল্ল, চোখেমুখে উজ্জলতা, এরা ঠিক সেরকম নয়। এরা হচ্ছে বিশ্বের বিভৎসতম নীপিড়নের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া কিছু শিশু।
রোহিঙ্গা শিবিরে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কাইল লিখেছেন, বাংলাদেশে আমরা প্রতিদিনই বর্ধিত চাহিদার মুখোমুখি হচ্ছি। বলতে গেলে এটিই এখন সবচেয়ে জরুরী কাজ। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইতমধ্যে বলেছে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের জন্য এটিই এখন প্রয়োজন এবং তা অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে।
কাইল লিখেছেন, কানাডা সম্প্রতি ৩.৫৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। এই সহায়তাকে আমি স্বাগত জানাই। এই বরাদ্দটা অবশ্য শিশুদের সহায়তার জন্য। কিন্তু আমি মনে করি কানাডার আরো এগিয়ে আসা উচিত। কানাডার উচিত হবে অধিকতর সহায়তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানো।
সূত্র: নতুনদেশ ডটকম
বিডি প্রতিদিন/৪ অক্টোবর ২০১৭/হিমেল