মালয়েশিয়ার ১৪তম সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতার মসনদে বসতে যাচ্ছেন ড. মাহাথির মোহাম্মদ। ৩৭ বছর আগে প্রথমবার তিনি যখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন-তখন আর এখন যেন আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
যে গল্পের হিরো ড. মাহাথির মোহাম্মদ, সেই গল্পের শুরুটা কিন্তু অন্য আট-দশটি দুনিয়া পাল্টানো গল্পের মতোই সাদামাটা। বদলে ফেলার জন্য চাই জীর্ণশীর্ণ একটা অবয়ব। সেই অবয়বকে আমূল পাল্টে ফেলাটাই একজন শিল্পী কিংবা স্বপ্নদ্রষ্টার কাজ। মাহাথির সেই স্বপ্নদ্রষ্টা। আর মাহাথিরের স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু আজকের আধুনিক মালয়েশিয়া। কিন্তু আলো ঝলমলে যে আধুনিক মালয়েশিয়া আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে, সেই চোখ ধাঁধানো কী আগে থেকেই ছিল? ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। এই মালয়েশিয়া আসলে রূপকথার সফল বাস্তবায়নেরই প্রতিচ্ছবি।
একসময়ের মালয়েশিয়া ছিল দারিদ্র্যপীড়িত একটি অগোছালো রাষ্ট্র। শুধু কি দরিদ্রতা? দরিদ্রতার পাশাপাশি নিরক্ষরতা আর পশ্চাদমুখিতার কারণে অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা কাটানোর কোনো উপায়ই বলতে গেলে ছিল না। এরপর পাল্টানোর গল্পটাও কিন্তু একদিনের নয়।
টেংকু আবদুর রহমান প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহুধাবিভক্ত দেশটিতে রোপণ করেন ঐক্যের বীজ। ঐক্যের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত করে দেশ পরিবর্তনের যে ধারার সূচনা তিনি করেছিলেন তা তার উত্তরসূরি আবদুল রাজ্জাক, টোয়াংকু ইসমাইল এবং ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ ধরে রেখেছিলেন। এর মধ্যে শেষোক্তজন কেবল ধারা বজায় রেখেই ক্ষান্ত হননি। তার নীতি আদর্শ আর দেশ পরিচালনার জাদুস্পর্শে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন অন্য সবাইকে। তিনি আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ও রূপকার হিসেবে পৃথিবীতে নন্দিত হয়েছেন। মূলত মাহাথির মোহাম্মদের হাত ধরেই দারিদ্র্যপীড়িত মালয়েশিয়া পৌঁছে যায় স্বপ্নিল সাফল্যের বিশ্বে। স্বাধীনতার সময় যে মালয়েশিয়ার অধিকাংশ জনসমষ্টি ছিল বেকার অথবা অর্ধবেকার, মাত্র দুই দশকে নিজের দেশের বেকারত্ব ঘুচিয়ে সেই মালয়েশিয়ায় কর্মরত রয়েছেন বিদেশের লাখ লাখ কর্মী। স্বাধীনতার সময় এমনকি পরবর্তী সময়েও যে মালয়েশিয়া প্রায় প্রকম্পিত হয়েছে নিম্নস্তরের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়, সেই মালয়েশিয়া আজ রূপান্তরিত হয়েছে একটি সুস্থ, নিরাপদ, উদার, কল্যাণমুখী জনপদে।
কিন্তু মাহাথির মোহাম্মদ এবং পূর্বসূরিদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। মাহাথির অতীতকে স্মরণে রেখে বর্তমানকে সাজিয়েছেন এবং বর্তমানকে সাজানোর সময় ভবিষ্যেক সুস্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন। আর তাই তো ৯২ বছর বয়সী একজন মানুষকে মালয়রা আবারও ক্ষমতার মসনদে বসার রায় দিলেন।
বিডি-প্রতিদিন/১০ মে, ২০১৮/মাহবুব