ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে স্পেনে মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম। গত ১৬ জুলাই ইউরোপিয়ান পরিসংখ্যান অফিস (ইউরোস্ট্যাট) কর্তৃক এ তথ্য প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রকাশিত ইউরোস্ট্যাট এর তথ্য অনুসারে স্পেনে গড়ে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ৮শ ২৯ জনের মৃত্যু হয়।
স্পেনের পর মৃত্যুর হার কম রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স (৮শ ৩৮ জন), ইতালি (৮শ ৪৩) ও মাল্টায় (৮শ ৮২)। অপরদিকে ইউরোপে সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার বুলগেরিয়ায়। দেশটিতে গড়ে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ১হাজার ৬ শ জন মৃত্যু বরণ করেন।
ইউরোস্ট্যাট এর তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালে ইউরোপে ৩৬ শতাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন হৃদরোগজনিত কারণে ও ২৬ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ক্যান্সারে। ডেনমার্ক, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্যে মানুষের মৃত্যুর প্রধাণ কারণ হচ্ছে ক্যান্সার।
স্পেনের জাতীয় সংবাদপত্র ‘এল পাইস’ বৃটেনের সংবাদপত্র ‘দ্য টাইম্স’ এর একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ২০৪০ সালের মধ্যে স্পেনের নাগরিকরা বিশ্বে দীর্ঘ আয়ুর অধিকারী হবেন। অধিক ধুমপান ও মদ্যপানের পরও স্পেনে কেন মৃত্যুর হার কম? কারণ হিসেবে ‘এল পাইস’ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেনের ঐতিহ্যগত খাদ্য ও জীবনধারা মৃত্যুর হার কমাতে সহযোগিতা করছে।
‘দ্য টাইম্স’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পেনের মৃত্যুর হার কমার পেছনে ৭টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে- ১. হাঁটার অভ্যাস: জিম কম করলেও সপ্তাহে ৪ দিন স্পেনের ৭৬ শতাংশ মানুষ গড়ে ১০ মিনিটের জন্য হাঁটেন, যা স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা করে। ২. ম্যাডিটেরিয়ান খাদ্য: পরিমিত ও তাজা খাবার তালিকা, বিশেষ করে তাজা মাছ, শাকসব্জি, ফলমূল, অলিভ তেল সহজলভ্য থাকায় নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, ৩. দুপুরে ঘুমানো: দুপুরে স্পেনের ১৮শতাংশ মানুষ ঘুমালেও স্প্যানিশ ডাক্তাররা পরামর্শ দেন দুপুরে অন্তত ২৬ মিনিট হলেও চোখ বন্ধ রাখার জন্য, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ৪. বিরতীপূর্ণ কর্ম: স্পেনের মানুষ বছরে গড়ে ১ হাজার ৬৮৭ ঘন্টা কাজ করেন, যা জার্মানি থেকে ৩৩১ ঘন্টা, ফ্রান্স থেকে ১৭৩ ঘন্টা ও সুইজারল্যান্ড থেকে ১১৭ ঘন্টা বেশি। দীর্ঘ কর্মসময় পার করলেও নিয়মিত ছোট বিরতী নিয়ে থাকেন স্পেনের মানুষ, যা স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। ৫. অধিক যৌন মিলন: যৌন মিলন মস্তিষ্ক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। অধিক ও নিয়মিত যৌন মিলন করে থাকেন স্প্যানিশরা। স্পেনের মহিলারা সপ্তাহে গড়ে ২ দশমিক ১ বার যৌন মিলন করে থাকেন, যেখানে বৃটিশ মহিলারা যৌন মিলন করে থাকনে গড়ে ১ দশমিক ৭ বার। ৬. ভাষার (স্প্যানিশ) মাধুর্য: ইউনিভার্সিটি অব ভেরমন্ট এর অধ্যাপক পিটার ডড্স বিশ্বে সর্বোচ্চ ব্যবহৃত ১০টি ভাষা থেকে ১ মিলিয়ন শব্দ নিয়ে গবেষণা করে জানান, স্প্যানিশ ভাষায় সবচেয়ে বেশি ‘পজিটিভ’ শব্দ যেমন ‘ভালোবাসা’, ‘হাসি’ ব্যবহৃত হয়। পজিটিভ কথাবার্তাও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ৭. রাতে হাল্কা খাবার (তাপাস): স্প্যানিশরা রাতের খাবারে তাপাস (ছোট ছোট খাবারের সমন্বয়) রাখেন, যা ভারী খাবার থেকে স্বাস্থ্যরক্ষায় উপযোগী।
সূত্র: এল পাইস।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ