নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) বাস্তবায়নের ঘোষণায় উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা ভারত। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ ভারত। শুক্রবারও দিনভর দেশটির নানা প্রান্তে বিক্ষোভ ও পুলিশি তৎপরতার চিত্র উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। কোথাও কোথাও জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা (কারফিউ)। আবার কোথাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবুও বিক্ষোভ থামছে না।
বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুর প্রতিবাদ-মিছিল থেকে আটক করা হয় প্রথিতযশা ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে। এছাড়া ওই দিন বিক্ষোভে দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এমনকি কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল ম্যাঙ্গালুরুর পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়।
এদিকে বেঙ্গালুরুতে টাউন হলের কাছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবার প্রতিবাদ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ দিন কোডাগুতে ১৪৪ ধারা জারি করে কর্নাটক প্রশাসন। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়ায় কেরালার ৮ জন সাংবাদিক ও ক্যামেরা প্রতিনিধিকে আটক করে ম্যাঙ্গালুরু সাউথের পুলিশ। সাত ঘণ্টা পর ছাড়া হয় তাদের।
মহারাষ্ট্রে গত দু'দিনের বিক্ষোভের ধারা বজায় ছিল শুক্রবারও। মুম্বাইতে একটি মসজিদের বাইরে এ দিন তুমুল বিক্ষোভ দেখান প্রতিবাদীরা। কুরলাতে জমা হন একশো'রও বেশি বিক্ষোভকারী। আবার হিঙ্গোলি জেলার কালামনুরি এলাকায় বিক্ষোভ করতে গিয়ে পাথর ছোড়ার ঘটনায় আহত হন চার জন। পুনেতেও ব্যাপক বিক্ষোভ করে জনতা। আরএসএসের সদর দপ্তর নাগপুরের রাস্তায় জমায়েত হয় ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষের।
বিক্ষোভের হাওয়া লেগেছে দেশটির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলেও। ত্রিপুরার পর যে রাজ্য প্রথম উত্তাল হয়েছিল এই বিক্ষোভে, সেই আসামের পরিস্থিতি এখন শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে বলেই গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। তাঁর আশ্বাস, কোনও অবস্থাতেই আসামের ভূমিপূত্রদের স্বার্থ ও অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হবে না। এদিকে আদালতের নির্দেশ মেনে এ দিনই ইন্টারনেট পরিষেবা ফের চালু হয় এই রাজ্যে। আসামের সঙ্গেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। তবে এ দিন সকাল ৫টা থেকে রাত ন'টা পর্যন্ত সেখানে কারফিউ শিথিল করা হয়।
অন্যদিকে বিহারে দীর্ঘ নীরবতার পর মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জানিয়ে দেন, তাঁর রাজ্যে এনআরসি হতে দেবেন না। শুক্রবার সকালে আবার আরজেডি প্রধান তেজস্বী যাদব ঘোষণা করেন, 'আগামিকাল (শনিবার) অচল থাকবে বিহার। মানুষের কাছে আবেদন, দয়া করে এই ধর্মঘটকে সমর্থন করুন।'
তেলঙ্গানা ও তামিলনাড়ুতে বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেন, 'এই আইনের বিরোধিতা করতে হবেই, তবে পুলিশের অনুমতি নেওয়ার পর ও শান্তিপূর্ণ ভাবে করতে হবে।' তবে শুক্রবারের নমাজের পর মক্কা মসজিদ থেকে ১৪ জনকে আটক করে প্রশাসন। তামিলনাড়ুও এই প্রতিবাদের বাইরে নেই। চেন্নাইয়ে এ দিন আটক হন ৬০০ জন। তার মধ্যে ছিলেন অভিনেতা সিদ্ধার্থ, টি এম কৃষ্ণের মতো সঙ্গীতকার।
এদিকে উত্তপ্ত কংগ্রেস শাসিত রাজ্য-ও। বিক্ষোভের কারণে আজ শনিবার সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত রাজ্যটির জবলপুরে নেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার জবলপুরের একাংশ সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠলে সেখানে কারফিউ জারি করা হয়। তবে ভোপালে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করতে দেওয়ায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান বিক্ষোভকারীরা।
সূত্র: এই সময়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল