২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১২:০৮

নদীর ধারে পুড়িয়ে হত্যা, চুল ও কানের দুলে রহস্য উন্মোচন

অনলাইন ডেস্ক

নদীর ধারে পুড়িয়ে হত্যা, চুল ও কানের দুলে রহস্য উন্মোচন

নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মা ও মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত দুজন হলেন রমা ও তার মেয়ে রিয়া। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, রীতিমতো পরিকল্পনা করে, আঁটঘাট  বেঁধে রমা এবং রিয়াকে কলকাতা থেকে হলদিয়ায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিল  শেখ সাদ্দাম হোসেন। মা-মেয়ের থাকার ব্যবস্থা করেছিল দুর্গাচকের হাসপাতাল রোডের একটি বাড়িতে। 

পুলিশের ধারণা, রাতে খাওয়ার সঙ্গে মাদক জাতীয় কিছু খাইয়ে বেঁহুশ করা হয় মা-মেয়েকে। তারপর রাতেই বন্ধুদের নিয়ে বেহুঁশ অবস্থাতেই মা-মেয়েকে নিয়ে যায় ঝিকড়খালির সুনসান নদী পাড়ে। ভোররাতে  সেখানেই জীবিত অবস্থায় আগুন দিয়ে দেওয়া হয় মা-মেয়ের গায়ে। অচৈতন্য অবস্থাতেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃতু হয় দুজনের।

১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয়রা নদীর পাড়ে কিছু জ্বলতে দেখেন। তারাই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন দুটি দেহ পুড়ছে। তখনও আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। স্থানীয় বাসিন্দারা সেই আগুন নেভালেও, দেহ দুটি শনাক্ত করার মতো অবস্থায় ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দুটি দেহই পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বেঁচে গিয়েছিল এক জনের কয়েক গাছি চুল এবং অন্য জনের কানের দুল। পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। সেখান  থেকেই জানা যায়, দুজনের দেহেই আগুনের ক্ষত ‘অ্যান্টি মর্টেম’ অর্থাৎ মৃত অবস্থায় পোড়ানো হয়নি। জীবিত অবস্থায় পোড়ানো হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের হাতে দুটি দেহ শনাক্ত করার মতো কোনো সূত্র ছিল না। কিন্তু তদন্তকারীদের নজরে আসে এক জনের সোনালি সবুজ চুল এবং অন্যজনের সোনার কানের দুল। কানের দুল দুটি স্বস্তিকার আকারে এবং তাতে খোদাই করা এসজেপি এবং  কেডিএম।

তদন্তকারীদের মতে, আমরা ওই দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে দেহ শনাক্ত করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিই। অনেক ফোন আসে। সেগুলো খতিয়ে দেখতে দেখতেই এক ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি ওই কানের দুলের মালিক সম্পর্কে কিছু তথ্য দেন। সেই সূত্রে এগোতে গিয়েই হদিস মেলে নিউ ব্যারাকপুরের মা-মেয়ের।

জানা গেছে, প্রথমে রমা এবং রিয়ার কোনো আত্মীয়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি, যাদের কাছ থেকে কোনো বাড়তি তথ্য মেলে। তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের দল রমা-রিয়ার পাড়ায় খোঁজ করে জানতে পারে যে তারাও বেশ কয়েক দিন ধরে নিখোঁজ। তাদের পাড়ায় না থাকার সময়টা মিলে যায় দেহ পাওয়ার সময়ের সঙ্গে। পুলিশ প্রতিবেশীদের কাছ থেকেই জোগাড় করে মা-মেয়ের  ফোন নম্বর।

সেই ফোন নম্বরের সূত্র ধরে এগোতে গিয়েই জানা যায়, মা- মেয়ের ফোনের টাওয়ার লোকেশন ১৭ তারিখ রাতেও মিলছে হলদিয়াতেই। ফোনের সূত্র ধরেই হদিস মেলে আরও কয়েক জনের। তাদের সঙ্গে কথা বলেই পুলিশ জানতে পারে, মা-মেয়ের সঙ্গে যোগ রয়েছে এসকর্ট সার্ভিস বা দেহ ব্যবসার।

পুলিশ সূত্রে খবর, টুকরো টুকরো তথ্য একজোট করে তারা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে পান আরও একটি মোবাইল নম্বর। মা- মেয়ের ফোন থেকে ওই নম্বরে দেহ উদ্ধারের আগের রাতে বা তার আগে কয়েক দিনে বেশ কয়েক বার কথা হয়েছে ওই মোবাইল নম্বরের মালিকের। আর সেই নম্বরের মালিকের খোঁজ করতে গিয়ে  দেখা যায় সে নিজেও হলদিয়ার বাসিন্দা এবং হলদিয়াতেই রয়েছে।

তদন্তে অনেকটাই এগিয়ে যায় পুলিশ। ওই মোবাইল নম্বরের মালিক শেখ সাদ্দাম। বাড়ি দুর্গাচক থানা এলাকাতেই।  খোঁজ নিয়ে তাকে পাওয়া যায় একটি হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায়। হাতে ব্যান্ডেজ। চিকিৎসক পুলিশকে জানান, হাতে ক্ষত রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে তথ্য, প্রথমে স্বীকার করতে না চাইলেও, বারবার ফোনালাপের তথ্য সামনে আনতেই জেরায় ভেঙে পড়ে সাদ্দাম। স্বীকার করে রিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগের কথা। পেশায় ঠিকাদার সাদ্দাম পুলিশকে জানায়, কোনো ম্যাসাজ পার্লারে যাতায়াতের সুবাদেই আলাপ হয় রিয়ার সঙ্গে। সেখান থেকে সম্পর্কও তৈরি হয়।

পুলিশের দাবি, সাদ্দাম নিজে বিবাহিত হলেও, সেই তথ্য লুকিয়ে রিয়াকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিয়ে না করায় চাপ দিচ্ছিল মা-মেয়ে।

সাদ্দাম জেরায় দাবি করেছে, রীতিমতো ব্লাকমেইল করছিল মা-মেয়ে। আর তা থেকে মুক্তি পেতে খুনের ছক কষে সাদ্দাম। হলদিয়ায় ডেকে পাঠায় রিয়া-রমাকে। এমনভাবে খুনের পরিকল্পনা করে যাতে মা-মেয়েকে শনাক্ত না করা যায়। তাই জীবিত অবস্থায় পুড়িয়ে দেয়। পুলিশ জানায়, গ্রেফতার সাদ্দাম এবং তার বন্ধু মনজুর আলম ছাড়াও আরও কয়েকজন এই জোড়া খুনে জড়িত। পুলিশ তাদের খুঁজছে। 

বিডি প্রতিদিন/আল আমীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর