জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিরাপত্তা সংকট এবং সংকট উত্তরণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আন্তরিক অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন হাসপাতালটির চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে জুলাই আহতদের পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) হাসপাতাল বন্ধের ১৬তম দিনে স্বল্প পরিসরে আউটডোর সেবা চালু করা হয়। এর পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একসঙ্গে সভায় বসেন। পরে তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জুলাই আহতদের পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি দেন। তার একটি অনুলিপি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম এর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
আমরা জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স , কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত ‘জুলাই আন্দোলন’-এ আহত সব রোগীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও মানবিক বিবেচনায় উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি স্মারকলিপিতে বলা হয়, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বর্তমানে আমাদের হাসপাতাল এক চরম নিরাপত্তা সংকট ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন। চিকিৎসার প্রয়োজন শেষ হওয়া সত্ত্বেও কিছু রোগী প্রায় ১০ মাস যাবৎ অপ্রয়োজনে হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তারা হাসপাতালের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে উশৃঙ্খল আচরণ, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের গালিগালাজ, শারীরিক আক্রমণ, এমনকি হাসপাতাল পরিচালকের ওপর হামলা ও আগুন লাগানোর হুমকিসহ নানাবিধ সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। তাদের দখলে থাকা সিটগুলো প্রকৃত দরিদ্র ও জরুরি রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে অনেকেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি ও অপারেশনে তারা প্রভাব বিস্তার এবং ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, তারা (জুলাই আহত) পরিচালক স্যারকে আটকে রাখেন এবং গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিতে চেষ্টা করেন। সর্বশেষ সশস্ত্র আক্রমণ করে অনেক চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গুরুতর আহত করে, হাসপাতালের অনেক স্থাপনার ক্ষতি করেন তারা। সংকট সমাধান এবং পরবর্তী চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কতৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড ৪ জুন হাসপাতালে আহত রোগীদের দেখতে আসেন। ৫৫ জন আহতের মধ্যে মাত্র ৩০ জন মেডিকেল বোর্ডে উপস্থিত হন এবং তাদের কারোরই হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই বলে মেডিকেল বোর্ড মতামত দেয়। কিন্তু ছুটি দেওয়া সত্ত্বেও তারা হাসপাতাল ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং আবারও চিকিৎসকদের অবরুদ্ধ করেন।
এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের সুষ্ঠু চিকিৎসার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা ৮টি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো-
১. আহত ‘জুলাই যোদ্ধা’দের পূর্ণ পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২. যেসব রোগীর আর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নেই, তাদের ছাড়পত্র দিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. তাদের কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হলে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়/সিএমএইচ/ ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
৪. অনাবশ্যক রোগী ভর্তি প্রতিরোধে একটি কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় আহত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
৮ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি চিকিৎসক-নার্সদের
৬. হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. আহতদের সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপযুক্ত স্বীকৃতি দিতে হবে।
৮. ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করতে হবে।
স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল একটি দিনের জন্য বন্ধ থাকবে এটি কোনভাবেই কারো কাম্য নয়। আমরা বিশ্বাস করি, অবিলম্বে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো না নিলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনার (স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) সুদৃষ্টি ও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল