করোনাভাইরাসের তান্ডবের মধ্যেই ২০ জুন শনিবার ওকলাহোমা স্টেটের তালসা সিটিতে নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, ‘৩ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয় দিলে সামনের বছরেই বিশ্বে ইতিহাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে শীর্ষে নিয়ে যাবো। এজন্য দরকার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।’ এই সমাবেশে ট্রাম্প ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যো বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি হলেন বামপন্থি মাফিয়াদের হাতের পুতুল। যারা যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে চায়।’
১৯ হাজার আসন বিশিষ্ট মিলনায়তনের এই সমাবেশ উপলক্ষে ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে মনে করে মিলনায়তনের বাইরে স্টেজ করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ১৫ হাজারের বেশী মানুষ ছিলেন না। এজন্যে মিলনায়তনের বাইরের কর্মসূচি স্থগিতের অজুহাত দেখানো হয়েছে পাল্টা বিক্ষোভকারিদের হুমকি-ধমকিকে। যদিও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে দুই শতাধিক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এহেন পরিস্থিতিকে মূলত করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আতংককে দায়ী করা হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের মত তার অনুসারি কেউই মাস্ক পরবেন না বলে আগেই জানিয়ে দেন। বাস্তবেও তার প্রমাণ দেখা গেছে। একজনও মাস্ক পরেননি। শুধু গণমাধ্যম কর্মীরা ছিলেন মাস্ক পরে।
প্রায় দু’ঘণ্টার এ বক্তব্যে একই প্রসঙ্গের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে অসংখ্যবার। বিশেষ করে গত সপ্তাহে মিলিটারি একাডেমির গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সময় মঞ্চ থেকে নামার সময় ট্রাম্পকে খুবই দুর্বল মনে হয়েছে এবং বক্তব্যের সময় পানির গ্লাস ধরতেও অপর হাতের সাপোর্ট নেয়ার দৃশ্য বারবার টিভিতে প্রদর্শনের ঘটনাকে খন্ডনের জন্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ কয়েক মিনিট সময় নিয়েছেন। এমনকি, এই সভায় ডায়াসে রাখা এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে তা পান করে সকলকে জানান দিলেন যে, তিনি কোনভাবেই দুর্বল নন এবং পারকিন্সনের মত জটিল কোন রোগেও আক্রান্ত নন। এ সময় তিনি তার স্বভাব অনুযায়ী শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলোকে ‘ফেইক নিউজ’র আস্থানা হিসেবে আক্রমণ করেছেন।
উল্লেখ্য, এই সমাবেশের বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দেয়া হয়নি সিএনএনসহ বেশ কটি টিভিকে। ফক্স টিভি সে সুযোগ নিয়েছে।
এতে ডেমক্র্যাটিক পার্টির ২০ সিটি মেয়রকে ব্যর্থ প্রশাসক হিসেবে অভিহিত করে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা এতই ব্যর্থ যে, সিটির অধিবাসীগণের ৩০% এখনও দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করছেন। বাল্টিমোর এবং ডেট্রয়েট সিটিতে সবচেয়ে বেশী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্য সিটিতেও অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে কনিষ্ঠতম সদস্য নিউইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া অকাসিয়ো-করটেজ এবং মিনেসোটার কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমরের নামোল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘এরা হচ্ছেন আমেরিকার শত্রু। এরা সারাক্ষণই আমেরিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত করে। এজন্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে আমেরিকাকে আবারো গ্রেট আমেরিকায় পরিণত করতে।
সোমালিয়া-আমেরিকান ইলহান ওমরের প্রতি ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেন, যে দেশে আইন শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। যে দেশের মানুষ খাবারের জন্যে সারাক্ষণ হানাহানী-মারপিট করে। সেই দেশের মানুষ আমেরিকায় এসে আমাদের পরামর্শ প্রদানের ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবার রানিংমেট হিসেবে হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত থেকেও যো বাইডেন আমেরিকার সামগ্রিক কল্যাণে কিছুই করতে পারেননি উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট হবার আগেও চার দশকের মত বিভিন্ন দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অথচ কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের জন্যে তিনি কিছুই করেননি। অপরদিকে, আমি গত সাড়ে তিনি বছরে কৃষ্ণাঙ্গদের কল্যাণে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি-যা আর কেউ কখনোই করেননি।
বর্তমানের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘পুলিশী ব্যবস্থাকে সংস্কারের জন্যে আমিই সর্বপ্রথম নির্বাহী আদেশ জারি করেছি। পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে। তবে তাদেরকে অবজ্ঞা-অবহেলার সুযোগম নেই। গুটিকতক বাজে অফিসারের কারণে গোটা পুলিশ বাহিনীর ওপর দোষ চাপানো সমীচিন নয় বলে পুনরায় উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমেরিকানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমেরিকাকে অহংকারের আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে। নিরাপদ আমেরিকা গড়তেই ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমক্র্যাটদের পরাস্থ করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন