বদলে গেছে আফগানিস্তানের চেনা পতাকা। তালেবানের সাদা পতাকা উড়ছে রাজধানী কাবুলের মসনদে। যার বিরোধিতা করে উত্তরে জালালাবাদসহ দু’টি শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। তালেবানের পতাকা সরিয়ে পূর্বতন সরকারের জাতীয় পতাকা তোলা হয়েছে সেখানে রাস্তায় রাস্তায়। তবে এই প্রথমবার আফগানিস্তানের পতাকা বদল হয়নি।
১০০ বছর আগে ব্রিটিশদের হাত থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন হওয়ার মুহূর্ত থেকে আজ পর্যন্ত অন্তত ১৮ বার বদলেছে এই পতাকা।
১৯০১ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছেন সম্রাট হাবিবুল্লাহ খান। তার রাজত্বে যে পতাকার প্রচলন হয় তার মাঝে একটি মসজিদের ছবি ছিল। মসজিদের ঠিক নীচে ছিল গুন চিহ্নের মতো অবস্থানে দু’টি তলোয়ারের ছবি। এই পুরোটাকে ঘিরে ছিল একটি ফুলের গোলাকার মালা।
১৯২১ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে পুরোপুরি মুক্তিলাভ করে আফগানরা। তখন রাজা ছিলেন আমানুল্লাহ খান। তিনি পতাকার ভেতরের মসজিদের ছবি একটু বদলে দিলেন। নীচে তলোয়ারের আকারও খুব ছোট করে দিলেন এবং ঘিরে থাকা গোলাকার ফুলের মালার বদলে আট চূড়া বিশিষ্ট একটি নকশা এঁকে দিলেন। নতুন রূপের পতাকা পেল আফগানিস্তান।
এর পাঁচ বছর পর ১৯২৬ সালে ফের তিনি পতাকার নকশা বদলে দিলেন। চারপাশের আট চূড়া বিশিষ্ট নকশা বদলে ফের আগের গোলাকার ফুলের মালা নিয়ে আনলেন। পতাকায় কোনও তলোয়ারের নকশা ছিল না এবার।
১৯২৯ সালে রাজা হাবিবুল্লাহ কালাকানির আমলে ফের পাল্টে যায় পতাকা। লাল, কালো, সাদা-তিন রঙে তৈরি হয় নতুন পতাকা। ওই বছরই হাবিবুল্লাহকে সরিয়ে সিংহাসনে বসেন পূর্বতন রাজা আমানুল্লার কাজিন মোহাম্মদ নাদির শাহ। তার জমানায় ফের পতাকার নকশার কিছুর বদল ঘটালেন তিনি। এবার তিন রঙের পতাকার মাঝে আমানুল্লার সেই আট চূড়া ঘেরা মসজিদের নকশা বসিয়ে নতুন ভাবে সামনে আনলেন পতাকা। আগের লাল, কালো, সাদা রং বদলে হল মাঝে লাল এবং দু’দিকে কালো এবং সবুজ।
৪ বছর পর ১৯৩৩ সালে খুন হন মোহাম্মদ নাদির শাহ। সিংহাসনে আসীন হলেন তার ছেলে মোহাম্মদ জাহির শাহ। পতাকার রং এক রেখে ভিতরের নকশা একটু বদলে ফেললেন তিনি। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এই পতাকাই আফগানিস্তানের প্রতীক ছিল।
১৯৭৩ সালে মোহাম্মদ দাউদ খান ক্ষমতায় এলেন। পতাকায় উল্লিখিত সাল মুছে দিলেন তিনি। বাকিটা একই রাখলেন। এক বছর এই ভাবেই ছিল। ১৯৭৪ সালে পতাকার তিনটি রঙের অবস্থান বদলে দিলেন এবং তার এক পাশে ডানা মেলে থাকা ঈগল পাখির একটি নকশা যোগ করলেন তিনি।
১৯৭৮ সালে কমিউনিস্টদের হাতে খুন হন দাউদ। আফগানিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হলেন নুর মোহাম্মদ তারিকি। তিনরঙা পতাকা পরিণত হল পুরো লাল রঙে। এক পাশে গমের ছবি দিয়ে ঘেরা একটি শব্দ। যার অর্থ ‘জনগণ’।
১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বরে খুন হন নুর মোহাম্মদ। তার উত্তরসূরি হলেন হাফিজুল্লা আমিন। ওই বছর ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের পরিস্থিতির উপর হস্তক্ষেপ করে বাবরাক কারমালকে নতুন প্রেসিডেন্ট করে দেয়। তারপর ফের একবার বদলে ফেলা হয় পতাকা।
ছ’বছর পর ফের নতুন প্রেসিডেন্ট পেল আফগানিস্তান। এ বার মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ। প্রেসিডেন্টের বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও একবার বদলে গেল পতাকা।
১৯৯২ সালে কাবুলের দখল নেয় মুজাহিদিন। বুরহানুদ্দিন রাব্বানি হলেন নতুন প্রেসিডেন্ট। তার আমলে ফের পতাকা বদলে যায় অনেকটাই। সবুজ, কালো এবং সাদা-এই তিন রঙে সেজে ওঠে পতাকা। আমানুল্লা এবং নাদির শাহের আমলে পতাকার মাঝে যে নকশা ছিল, সেই দুইয়ের মিশেলে নতুন নকশা বানানো হল।
রাব্বানির সময়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় মুজাহিদিনের। ধীরে ধীরে কাবুলের দখল নিয়ে নিল তালেবান। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানে তালেবান-শাসন শুরু হল। সাদা কাপড়ের মাঝে কালো হরফে কালেমা শাহাদাত লেখা পতাকা উড়ল কাবুলে।
২০০১ সালে আফগানিস্তানের দখল নেয় আমেরিকার সেনা। রাব্বানি ফের ক্ষমতায় ফিরলেন। তার সঙ্গে ফের আরও একবার পতাকার বদল ঘটল। এরপর প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের আমলে ২০০৪ এবং তারপর ২০১৩ সালে, আশরাফ গনির আমলে ২০১৪ সালে পতাকা বদলায়।
২০২১ এর আগস্টে ফের আফগানিস্তান দখল করে নেয় তালেবান। ফের কাবুলের মসনদে নিজেদের পতাকা উড়িয়ে দেয় তালেবান।
সূত্র: আনন্দবাজার।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন