অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের বছর ঘুরে আসতেই আবারও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এক বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে মোটা চালের (পাইজাম) দাম। এ ছাড়া মিনিকেট, নাজিরশাইল, স্বর্ণাসহ সব ধরনের চালের দাম কমপক্ষে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে প্রায় তিন বছর পর জুন ২০২৫-এ মূল্যস্ফীতির চাপ কমে সাড়ে ৮ শতাংশে নামলেও পরের মাস জুলাইয়ে আবার বেড়েছে। এর বড় কারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবির তথ্যানুসারে, ২০২৪-এর ২১ আগস্টের তুলনায় ২০২৫-এর ২১ আগস্টে চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, গুঁড়া দুধ, মাছ, মুরগিসহ অন্যান্য মাংসের দাম বেড়েছে। একই সময়ে সবচেয়ে বেশি কমেছে আলুর দাম। এক বছরে আলুর দাম কমেছে প্রায় ৪৮ শতাংশ। বর্তমানে ১০০ টাকায় ৫ কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। অথচ এক বছর আগে ১ কেজির দাম ছিল ৭০-৭৫ টাকা। একই সঙ্গে পিঁয়াজ-রসুনের দামও কমেছে ২৭ ও ৪৫ শতাংশ। অবশ্য গত এক মাসে পিঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ২৫ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে ডিমের দাম এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৩ শতাংশ। যদিও গত এক মাসে ডজনে বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। আটার দামও বেড়েছে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত। ময়দার দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ। খোলা আটার দামও বেড়েছে ১০ শতাংশ।
এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে ন্যায্যমূল্যে ট্রাক সেল আবারও শুরু করেছে টিসিবি। প্রতিদিন এ ট্রাকের পেছনে মানুষের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে অনেক চাকরিজীবীও এখন কম দামে চাল, ডাল, তেল আর আটার জন্য এসব ট্রাকের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রথম দিকে নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট কিছুটা ভাংতে পারলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতে সেই পুরোনো সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে জিনিসপত্রের দাম আবারও বাড়ছে। বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল, মসলা, মাছ, মাংস, ডিম এবং শাকসবজির দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। গতকালও বাজারে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যায়নি। ১ হালি কাঁচকলার দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকায় উঠে গেছে। ১ পিস লাউ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্চে। এসব সবজির দাম বৃদ্ধির জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানের বন্যা এবং অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতকে দায়ী করা হচ্চে। যদিও গত বছর এর চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়া সত্ত্বেও সবজির দাম এত বেশি ছিল না। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাজারে সিন্ডিকেট সব সময় থাকে। তবে সরকারের মনিটরিংব্যবস্থা দুর্বল হলে সিন্ডিকেট আরও বেশি সক্রিয় থাকে। এখন সেটাই ঘটছে। এ ছাড়া নির্বাচনের মৌসুম আসায় পথে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বেড়ে থাকতে পারে। এর জন্যও জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে। তবে আবহাওয়াগত একটা ব্যাপার যে দায়ী নয়, তা কিন্তু নয়।’