ডোনেটস্ক ও লুহানস্ক হচ্ছে পূর্ব ইউক্রেনের স্বঘোষিত দুটি বিদ্রোহী অঞ্চল। গত সোমবার স্বাধীনতার জন্য তাদের নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বীকৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
২০১৪ সালে গণআন্দোলনের মুখে ইউক্রেনে রাশিয়া-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোচের পতন হলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই প্রজাতন্ত্রটির ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নিজ দেশের অন্তর্ভুক্ত করেন পুতিন। তার যুক্তি—১৯৫৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির আগে ক্রিমিয়া তৎকালীন রুশ প্রজাতন্ত্রের অংশ ছিল।
এরপর পুতিন নজর দেন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের রুশভাষী ডোনেটস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের ওপর। গত ৭ বছর ধরে এই অঞ্চল দুটি নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক সংঘাত বিরাজ করছে এবং তখন থেকেই সেখানে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চলছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের।
সেখানে সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। কিন্তু কী এই অস্থিরতার কারণ? কেন এত তোলপাড় এ অঞ্চল নিয়ে?
ডোনেটস্ক ও লুহানস্ক
ডোনেটস্ক ও লুহানস্ককে একত্রে ডনবাস বলা হয়। খনি অঞ্চল ডনবাসের মূল শহর বলা হয় ডোনেটস্ককে। এর চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে খনিজ বর্জ্য। খনিপ্রধান এ শিল্পকেন্দ্র একসময় পরিচিত ছিল ‘স্টালিনো’ নামে। ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রও এ শহরটি। এখানে বর্তমানে বসবাস ২০ লাখ মানুষের। সেখানে রুশভাষী মানুষ প্রায় ৪৮ শতাংশ।
অন্যদিকে, শিল্প শহর লুহানস্ক একসময় পরিচিত ছিল ‘ভরোশিলোভগ্রাদ’ নামে। প্রায় ১৫ লাখ জনসংখ্যার লুহানস্কও একটি শিল্প-প্রধান অঞ্চল। এখানে কয়লার বিশাল মজুত রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেখানে রুশভাষী শ্রমিকদের পাঠানো হয়। সেখানে রুশভাষী মানুষ প্রায় ৪৭ শতাংশ।
খনি উপত্যকায়ই একে অন্যের সঙ্গে এসে মিলেছে শহর দুটি। বড় কয়লা মজুদের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত কৃষ্ণসাগরের উত্তর তীর দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গেও সীমান্ত রয়েছে ডোনেটস্ক ও লুহানস্কের।
সংঘাত
২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে রাশিয়া ক্রিমিয়া সংযুক্ত করে নেয়। এরপরই ক্রেমলিন সমর্থিত এক বিদ্রোহে কিয়েভের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে অঞ্চল দুটি। ডনবাস উপত্যকাকে কেন্দ্র করে চলছে কিয়েভ ও মস্কোর এক সাংস্কৃতিক লড়াইও। মস্কো বলছে, পূর্ব ইউক্রেনের বড় একটি অঞ্চলজুড়ে থাকা রুশ ভাষাভাষীদের ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদের হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। ডোনেটস্ক ও লুহানস্কের স্ব-ঘোষিত স্বাধীনতায় স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক মহল।
দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রচেষ্টা
পূর্ব ইউক্রেনের চলমান এ দ্বন্দ্ব নিরসনে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল মিনস্ক চুক্তি। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। ইউক্রেন সরকার ও বিচ্ছিন্নতাবাদী উভয় পক্ষই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে একে অন্যের বিরুদ্ধে। জড়িয়ে পড়ার কারণে ব্যর্থ হয়েছে কয়েকটি যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টাও।
গত কয়েক বছরে পূর্ব ইউক্রেনে বিভিন্ন হামলা ও সহিংসতায় নিহত হয়েছে অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী। এদের মধ্যে ২০১৮ সালের আগস্টে ডোনেটস্কের একটি ক্যাফেতে বোমাবর্ষণে মারা যাওয়া বিদ্রোহী নেতা আলেকজান্ডার জাখারচেংকো’র নামই সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি এমন কিছু প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, এ ধরনের আক্রমণের নেপথ্যে ছিল ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী। সূত্র: এএফপি, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, ব্লুমবার্গ, নিউ ইয়র্ক টাইমস
বিডি প্রতিদিন/কালাম