ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরুর আগেই মার্কিন গোয়েন্দারা ভবিষ্যত বাণী করেছিলো, যে এই অভিযানে বড় বিমান বহরকে কাজে লাগাবে রাশিয়া। নিমিষেই ইউক্রেনের আকাশ দখলে নেবে রুশ যুদ্ধ বিমান। তবে তেমন কিছুই ঘটেনি। সেনাদের কাজে লাগালেও বিমান বাহিনীকে এখনও বসিয়ে রেখেছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ। কিন্তু কেনো?
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই এই রহস্যের কূল কিনারা করতে পারছেন না। কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সামরিক বিশ্লেষকদের সহায়তা নিয়ে রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করেছে।
বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয় মার্কিন কর্মকর্তারাও বিষয়টি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন, এর কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তারাও অনেকটা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করা একজন উচ্চপদস্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, 'তারা (রাশিয়া) আসলে নিজেদের বিমান আর পাইলটদের অতিরিক্ত ঝুঁকিতে ফেলতে চায়নি।’
সামরিক বিশেষজ্ঞরাও বেশ অবাক! শক্তির বিচারে অনেকখানি পিছিয়ে থাকার পরও ইউক্রেনের নিজেদের বিমান এখনো তাদের আকাশ সীমায় উড়ছে। দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও এখনও বেশ কার্যকর।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্লেষকরা ভেবেছিলেন রাশিয়ান সামরিক বাহিনী দ্রুতই ইউক্রেনের বিমান বাহিনী আর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার চেষ্টা করবে।
‘দ্য মিস্টিরিয়াস কেস অফ দ্য মিসিং রাশিয়ান এয়ার ফোর্স’ নামে একটি নিবন্ধে লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (আরইউএসআই) থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক বলেছে, '১৯৩৮ সাল থেকে প্রায় প্রতিটি সামরিক অভিযানে এমন চিত্র দেখা গেছে। তাই যৌক্তিকভাবেই (ইউক্রেনে বিমান বাহিনীকে কাজে লাগাবে রাশিয়) এমনটা ঘটবে বলেই প্রত্যাশা করা হয়েছিলো।’
আরও অবাক করা বিষয়, রাশিয়ার বিমানগুলো এখন বিবাদমান সীমানাতেই উড়ছে। ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রাশিয়ান সামরিক বিশেষজ্ঞ রব লি বলেন, 'তারা (রাশিয়া) এখনো এমন কিছু করছে, যা অনেকটাই বিভ্রান্তিকর।'
রব লি’র ভাবনায় ছিলো সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেই রাশিয়া এই যুদ্ধ শুরু করবে। তার মতে, ‘কারণ সব সময়ই এরকমটা ঘটে, ক্ষয়ক্ষতি আর ঝুঁকি বাড়তে থাকে। তবে তারা তেমন কিছুই করছে না। কেনো তারা (রাশিয়া) ভিন্ন পথে হাঁটছে, সে ব্যাখা দেয়া সত্যিই কঠিন।'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন কিয়েভের একটি নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারপরও কেনো রাশিয়া বিমান বাহিনী ব্যবহার করেছে না, সেই হিসাব মেলাতেই সামরিক বিশ্লেষকরা হাসফাঁস করছেন।
ইরাকে নো ফ্লাই জোন দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মার্কিন থ্রি স্টার জেনারেল ডেভিড ডেপটুলা জানিয়েছেন, রাশিয়া আধিপত্য বিস্তারে কোনো কড়া পদক্ষেপ নেয়নি, এটা তাকে বিস্মিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়া বুঝতে পেরেছে নানামুখী অভিযান পরিচালনা করা সহজ বিষয় নয়। আর তারা যা ভেবে অভিযান শুরু করেছিলো, সেখানে তারা ততোটা ভালো অবস্থানে নেই।’
সামরিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, স্থলপথে থাকা সেনাদের সাথে রাশিয়ান বিমান বাহিনীর সমন্বয়ের অভাবটাও চোখে পড়ার মতো। যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা ইউক্রেনে বর্তমানে ৭৫টি বিমান ব্যবহার করছে রাশিয়া।
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল