নতুন গাড়ি বিক্রিতে জাপানকেও ছাড়িয়ে গেল দক্ষিণ এশিয়ার ভারত। বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ির বাজার এখন ভারত। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো নতুন গাড়ি বিক্রিতে এই অবস্থানে আসল ভারত।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ির বাজার হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।
প্রাথমিক তথ্যানুসারে, গত বছর ভারতে অন্তত ৪২ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট গাড়ি বিক্রি হয়েছে। যেখানে জাপানে বিক্রি হওয়া যানবাহনের সংখ্যা ৪২ লাখ।
সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্সের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে ভারতে মোট ৪১ লাখ ৩০ হাজার ইউনিট নতুন গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ডিসেম্বরে গাড়ি বিক্রির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে ভারতের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মারুতি সুজুকি। সংস্থাটির ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান যোগ করলে ভারতে বিক্রীত গাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২ লাখ ৫০ হাজার ইউনিটে। ডিসেম্বরে অন্যান্য গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করলে দেশটিতে বিক্রীত গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে ২০২১ সালে ২ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ইউনিট গাড়ি বিক্রি করে বিশ্বজুড়ে অটোমোবাইল বাজারের নেতৃত্ব দিয়েছিল। এরপর ১ কোটি ৫৪ লাখ ইউনিট যানবাহন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় এবং ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ইউনিট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিল জাপান।
কয়েক বছর ধরে ভারতে গাড়ির বাজার ওঠানামা করছে। ২০১৮ সালে দেশটিতে প্রায় ৪৪ লাখ যানবাহন বিক্রি হয়েছিল। তবে ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ৪০ লাখের নিচে নেমে যায়। সে সময় ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণে তারল্য সংকট গাড়ির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
এরপর আসে করোনা মহামারী। ২০২০ সালে দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে গাড়ির বিক্রি ৩০ লাখ ইউনিটের নিচে নেমে গিয়েছিল। এরপর ২০২১ সালে করোনাজনিত সীমাবদ্ধতা কিছুটা শিথিল হওয়ায় গাড়ি বিক্রিও পুনরুদ্ধার হয়েছিল। সে বছর ভারতে ৪০ লাখ ইউনিটের কাছাকাছি গাড়ি বিক্রি হয়েছিল। তবে তখন থেকে বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর সংকট গাড়ি বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তবে ভারতে বিক্রি হওয়া গাড়ির বেশির ভাগই জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যানবাহন। এর মধ্যে কিছু হাইব্রিড গাড়ি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের (ইভি) উপস্থিতি নেই বললেই চলে। পাশাপাশি ভারতীয় বাজারে বিক্রি হওয়ার গাড়িগুলো উন্নত অর্থনীতিতে বিক্রি হওয়া যানবাহনের তুলনায় কম সেমিকন্ডাক্টর থাকে বলে মনে করা হয়। এজন্য দেশটির অটোমোবাইল শিল্পে চিপ ঘাটতির প্রভাব কিছুটা কম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাছাড়া গত বছর চিপ সংকট কিছুটা কমে যাওয়ায় ভারতে গাড়ি বিক্রি পুনরুদ্ধার হয়েছে।
২০২২ সালে মারুতি সুজুকি, টাটা মোটরস ও অন্যান্য ভারতীয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রি বেড়েছে। দেশটির জনসংখ্যা বর্তমানে ১৪০ কোটি। চলতি বছরইভারত জনসংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ২০৬০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেশটিতে জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে আয়ের পরিমাণও ক্রমবর্ধমান রয়েছে।
ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোমনিটরের মতে, ২০২১ সালে ভারতীয় পরিবারের মাত্র ৮ দশমিক ৫ শতাংশ যাত্রাবাহী গাড়ির মালিক ছিল। অর্থাৎ দেশটিতে গাড়ি বিক্রি বাড়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া ইভি বিক্রি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে ভারতীয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে ইভিতে ভর্তুকি দেওয়া শুরু হয়েছে।
এদিকে গত বছর জাপানে যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি নিম্নমুখী হয়েছে। জাপান অটোমোবাইল ডিলার অ্যাসোসিয়েশন, জাপান লাইট মোটর ভেহিকল ও মোটরসাইকেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে দেশটিতে ৪২ লাখ ১ হাজার ৩২১ ইউনিট গাড়ি বিক্রি হয়েছে। করোনা মহামারী ও চীনে লকডাউনের কারণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় দেশটিতে গাড়ি বিক্রি কমেছে। জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গাড়ি বিক্রি হয়েছিল ১৯৯০ সালে। ওই বছর দেশটিতে ৭৭ লাখ ৭০ হাজার ইউনিট যাত্রীবাহী যানবাহন বিক্রি হয়েছিল। অর্থাৎ সর্বকালের সর্বোচ্চ থেকে গত বছর দেশটিতে গাড়ি বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাছাড়া দেশটির ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার কারণে অদূর ভবিষ্যতে গাড়ি বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধারের আশাও ক্ষীণ। ২০০৬ সালে জাপানকে পেছনে ফেলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম যানবাহনের বাজারে পরিণত হয়েছিল চীন। এরপর ২০০৯ সালে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম গাড়ির বাজারে পরিণত হয়। সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
বিডি প্রতিদিন/কালাম
