অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ৬ জন শিশুর একজনই খাদ্যাভাবে দিনাতিপাত করছে। আর ক্ষুধার্ত আমেরিকানের সংখ্যা হচ্ছে ৩ কোটি ৮০ লাখ। এরমধ্যে রাস্তা, ব্রিজ, সরকারি-বেসরকারি ভবন কিংবা পার্কে রাত কাটায় ৫ লাখ ৮২ হাজার আমেরিকান অর্থাৎ এরা গৃহহীন।
সিটি, স্টেট এবং ফেডারেল পর্যায়ে অভাবী ও ক্ষুধার্ত মানুষদের নিয়ে কর্মরত সংস্থাগুলোর পক্ষে ‘ন্যাশনাল হোমলেসনেস ল সেন্টার’র লিগ্যাল ডাইরেক্টর এরিক টার্স মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানান, আয়-রোজগারের পরিধি সীমিত হয়ে পড়ার পাশাপাশি বাড়ি ভাড়াসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রির মূল্য অবিশ্বাস্য রকমভাবে বাড়তে থাকায় গৃহহারা মানুষের সংখ্যা মার্চের মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে। এমন অবস্থা ঠেকাতে বেশ কটি সিটি ও স্টেট আইন তৈরী করেছে পার্ক, অথবা টেন্ট কিংবা গাড়িতে ঘুমানোকে বেআইনি করে।
এমনকি, সাবওয়ে অথবা ব্রিজের নিচে দিনাতিপাতকেও বেআইনি করা হচ্ছে। ন্যাশনাল হোমলেসনেস ল সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, শতাধিক পার্ক, সিটির অফিস-আদালতের বারান্দা অথবা মহাসড়কের আশপাশে তাবু গেড়ে বসবাসকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগণসহ পশ্চিমাঞ্চলীয় বেশ কটি স্টেট প্রশাসন গৃহহারা-সমস্যা নিয়ে কঠিন সংকটে পড়েছে বলে জানা গেছে। নিউইয়র্ক সিটিতে গত ২/৩ বছরে যতগুলো অপরাধ সংগঠিত হয়েছে তার অধিকাংশই গৃহহারারা করেছে বলে তদন্তে উদঘাটিত হয়েছে। এমনকি ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের নীচে ফেলে হত্যার মত ভয়ংকর অপরাধও অনেক গৃহহারা করেছে।
ফেডারেল তথ্য অনুযায়ী, এক বছর আগের জানুয়ারিতে গৃহহারা মানুষের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৮২ হাজার ৪৬২। চলতি জানুয়ারির প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপিত না হলেও তা দ্বিগুণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ, হাড় কাঁপানো শীতেও লসএঞ্জেলেস এবং নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন সিটির রেল স্টেশন, প্রাইভেট অফিসের বারান্দা কিংবা পাবলিক স্কুলের সন্নিকটে অথবা ব্রিজের নিচে শতশত মানুষকে রাত কাটাতে দেখা যাচ্ছে।
এ বছরের ১ জানুয়ারি মিজৌরি স্টেটের কোনো সম্পত্তিতে গৃহহারাদের ঘুমানো নিষিদ্ধ বিধি জারি হয়েছে। পার্ক এবং ব্রিজের নিচে কাউকে ঘুমাতে দেখলেই পুলিশ গ্রেফতার করছে। টেনেসী স্টেটেও নয়া বিধি অনুযায়ী তাঁবু খাটিয়ে রাত্রি যাপনকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে। ওরেগণ স্টেটের পোর্টল্যান্ড সিটি গত নভেম্বরে একটি বিল পাশ করেছে। সেখানেও তাঁবু গেড়ে বসবাসের কোন সুযোগ নেই।
এদিকে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ওরেগণ চ্যাপ্টারের পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপকে অমানবিক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। একই ধরনের বিধি করার পর সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গতমাসে আরিজোনা স্টেটের ফিনিক্স সিটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ওরেগণের সদ্য দায়িত্ব নেয়া স্টেট গভর্ণর টিনা কটেক সারা স্টেটে জরুরী অবস্থা জারি করেছেন গৃহহারাদের ঠেকাতে। নেভাদা স্টেটের ওয়াশো কাউন্টি কমিশনের ভোট হয় গত ডিসেম্বরে। সেখানেও একটি বিল পাশ হয়েছে তাঁবু গেড়ে বসবাসের বিরুদ্ধে। এ বিধি অমান্য করলে মাথোপিছু ৫০০ ডলার করে জরিমানা অথবা কারাবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কাউন্টির রিনো এবং স্পার্সেও একই বিধি বহাল রয়েছে। গৃহহারা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকায় পাবলিক স্কুল এবং ডে কেয়ার সেন্টারের ৫০০ ফুটের মধ্যে তাঁবু খাটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে লসএঞ্জেলেস সিটিতেও। এমনকি রাস্তা-ঘাটের পার্শ্ববর্তী খালি জায়গাতেও গৃহহারারা তাঁবু গাড়তে পারবে না নয়া এই বিধির কারণে। গৃহহারা সংকট মোকাবেলায় লসএঞ্জেলেস, লং বীচ সিটি মেয়র ছাড়াও লসএঞ্জেলেস কাউন্টি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল