২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১২:২৩

তিন কন্যা হারানো আহমাদের প্রশ্ন, ‘কে আমাকে বাবা বলে ডাকবে?’

অনলাইন ডেস্ক

তিন কন্যা হারানো আহমাদের প্রশ্ন, ‘কে আমাকে বাবা বলে ডাকবে?’

আহমাদ আল ঘুফেরি ভাগ্য গুণে সেই বোমাটির আঘাত থেকে বেঁচে যান। যে বোমাটি তার পরিবারের সদস্যদের কেড়ে নিয়েছে।

গাজা শহরে এক বোমা হামলাতেই আহমাদের পরিবারের আত্মীয়-স্বজন মিলে ১০৩ জনের প্রাণ গেছে। তখন তিনি সেখান থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলেন। ছিলেন পশ্চিম তীরের জেরিকো শহরে।

হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার সময় তেল আবিবের এক নির্মাণ সাইটে কাজ করতেন আহমাদ। ফলে তিনি বাড়িতে রেখে যাওয়া তিন সন্তান ও স্ত্রীর কাছে ফিরতে পারেননি। কারণ ইসরায়েলি বাহিনী তখন সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। 

সেসময় তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রত্যেক দিনই কথা বলতেন। সেই ৮ ডিসেম্বরও তার স্ত্রী শিরিনের সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। তবে এরপর ঘটে গেলো সব হারানোর ঘটনা। 

আহমাদ বলেছেন, ‌‘সে হয়তো জানতো যে সে মারা যাবে।’ ‘সে আমার কাছে ক্ষমা চাইলো। বললো যা কিছু খারাপ সে আমার সাথে করেছে তার জন্য ক্ষমা করে দিতে। আমি তাকে বললাম, এমন কিছু বলার কোনো দরকার নেই। আর এটাই ছিল আমাদের শেষ ফোনালাপ।’

সেদিন সন্ধ্যাতেই আহমাদের চাচার বাড়িতে বোমা ফেলে ইসরায়েলি বাহিনী। তার স্ত্রীসহ মারা যায় তিন কন্যাও। এই হামলায় আরো প্রাণ হারান আহমাদের মা, তার চার ভাই। সবমিলিয়ে একশ’র বেশি স্বজনকে এক হামলাতেই হারান এই ফিলিস্তিনি যুবক। 

গত সপ্তাহে ছোটো মেয়ের জন্মদিন পালন করেছেন আহমাদ। এ বছর তার মেয়ে নাজলা দুই বছরে পা দিতো। এখনও বেদনার অতল গহ্বর হাতড়ে ফেরেন আহমাদ। 

নিজের সন্তানদের সমাহিত করার সুযোগটুকুও মেলেনি। তাদের শেষ দেখাটাও দেখতে পারেনি আহমাদ। এখনো নিজের পরিবারের সদস্যদের অতীত ভাবতে পারছেন না তিনি। নির্বাক মুখায়বে অশ্রুর ফোয়ারা নামে তাদের কথা উঠলেই। 

আহমাদ করুণ মুখে বলেন, ‘আমার সন্তানরা ছিল ছোটো পাখির মতো।’ ‘আমার মনে হয় কোনো স্বপ্নের ঘোরে আছি। যা ঘটেছে তা এখনো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।’

নিজের ফোন আর ল্যাপটপ থেকে কন্যাদের ছবি সরিয়ে ফেলেছেন। কারণ, তাদের মুখ ভেসে উঠলেই আহমাদের চারপাশ ঝাপসা হয়ে আসে। তিনি জানিয়েছেন, একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমে তার পরিবারের বাড়ির প্রবেশ মুখে আঘাত হানে। এর ১৫ মিনিট পরই একটি যুদ্ধ বিমান ওই বাড়িতে বোমা ফেলে। ফলে চার তলা বাড়িতে মুহূর্তেই চুরমার হয়ে যায়।  

জেরিকো থেকেই আহমাদ এখনো গাজায় তার বেঁচে থাকা আত্মীয় স্বজনের সাথে ফোনে মাঝেমধ্যে যোগাযোগ করেন। তবে কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও নিজের বাড়িতে আর ফেরা হবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন আহমাদ। তিনি বলেছেন, ‘আমার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। আমি কার জন্য সেখানে ফিরবো? কে আমাকে বাবা বলে ডাকবে? আমার স্ত্রী সবসময় বলতো আমি তার সব। এখন এই কথা কে বলবে আমাকে?’

সূত্র: বিবিসি

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর