ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা জর্ডানের সাথে দীর্ঘ পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে একটি উচ্চ-প্রযুক্তির নিরাপত্তা বেড়া নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের প্রস্তাবিত এই মেগা-প্রকল্পটি জর্ডান উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক উপস্থিতি আরও সুসংহত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
রবিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা) ব্যয়ে নির্মিতব্য এই অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি ৪২৫ কিলোমিটার (২৬৪ মাইল) দীর্ঘ হবে। এটি উত্তর-পশ্চিমের হামাত গাদের সীমান্ত থেকে শুরু হয়ে একেবারে দক্ষিণে ইলাতের উত্তরে অবস্থিত সামার স্যান্ডস পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।
প্রকল্পটি আগামী জুন মাস থেকে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এটি সম্পূর্ণ হতে আনুমানিক তিন বছর সময় লাগবে। এই নিরাপত্তা বেষ্টনীতে একাধিক স্তরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে। যার মধ্যে রয়েছে একটি সুদৃঢ় দৃশ্যমান বেড়া, অত্যাধুনিক সেন্সর, দ্রুত মুভ করতে সক্ষম মিলিটারি ইউনিট এবং একটি অত্যাধুনিক কমান্ড ও কন্ট্রোল অবকাঠামো।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই নিরাপত্তা বেড়া নির্মাণের ফলে ইরান কর্তৃক প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনে অস্ত্র প্রেরণের যে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তা অনেকাংশে ব্যাহত হবে। এছাড়াও, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জোরদার হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এই প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো অধিকৃত পশ্চিম তীরের অংশ জর্ডান উপত্যকায় ইসরায়েলের উপস্থিতি বৃদ্ধি করা। এই লক্ষ্যে উপত্যকায় জাতীয় মিশন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠারও পরিকল্পনা রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোতে প্রি-মিলিটারি একাডেমি এবং জাতীয় সেবা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা জর্ডান সীমান্তে একটি উন্নতমানের বেড়া অথবা দেওয়াল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে এসেছেন। তবে সীমান্তটির বিশাল দৈর্ঘ্য এবং এর নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় অনেকেই এই উদ্যোগকে কার্যত অসম্ভব বলে মনে করতেন। বর্তমানে জর্ডান সীমান্তের কিছু অংশে পুরনো চেইন লিঙ্কের বেড়া রয়েছে, যেখানে কিছু অংশে সেন্সর লাগানো আছে। আবার কিছু এলাকায় কেবল কাঁটাতারের দুর্বল বেড়া দেখা যায়। নতুন এই প্রকল্পটি পুরনো এবং দুর্বল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিস্থাপন করবে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত এক দশকে এই সীমান্ত দিয়ে বিপুল সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র পাচার হয়েছে এবং সেই অস্ত্রশস্ত্র ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা ব্যবহার করেছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের "অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড"-এর অপ্রত্যাশিত সাফল্যের পর ইসরায়েলের সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা জনসমক্ষে আসে। এরপরই মূলত জর্ডান সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করার এই বৃহৎ প্রকল্পটি পুনরায় সক্রিয় করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল