রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সংক্ষিপ্ত

ইউরোপে তীব্র খরায় দ্রুত কমছে পানির স্তর

ইউরোপে তীব্র খরায় দ্রুত কমছে পানির স্তর

ইউরোপজুড়ে তীব্র খরায় বিভিন্ন নদী ও হ্রদের পানির স্তর অনেকখানি নেমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন নিমজ্জিত থাকা অনেক সম্পদ বের হয়ে আসছে, সঙ্গে মিলছে অপ্রত্যাশিত অনেক জঞ্জালও। মহাদেশটির নদী ও জলাশয়গুলোতে সর্বশেষ কবে পানির স্তর এতটা নিচে ছিল, তা হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া অন্যদের স্মরণে থাকারও কথা নয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক খরায় ভোগা স্পেনের প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখন পানির নিচ থেকে বের হয়ে আসা প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথরের একটি চক্রাকার সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক উৎফুল্ল; এ ধরনের পাথরের চক্র ‘স্পেনিশ স্টোনহ্যাঞ্জ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। স্পেনের প্রত্নতত্ত্ববিদরা পাথরের যে চক্রটিকে নিয়ে উল্লসিত সেটি একটি বাঁধের কারণে তৈরি হওয়া কৃত্রিম হ্রদের পানিতে ঢাকা ছিল। দোলম্যান অব গুয়াদালপেরাল নামের ওই পাথর চক্রটি দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ কাসেরেসের ভালদেকানাস জলাধারের এক কোনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

এই জলাধারের পানি এখন মোট ধারণক্ষমতার ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে, জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ হুগো ওবারমেয়ার ১৯২৬ সালে প্রথম এই ‘স্টোনহ্যাঞ্জটি’ আবিষ্কার করেছিলেন; কিন্তু ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোরে স্বৈরশাসনকালে এক উন্নয়ন প্রকল্পে ১৯৬৩ সাল থেকে এটি পানির নিচে চলে যায়। পুরো পাথর চক্রটি এরপর সব মিলিয়ে চারবার পানির ওপর মাথা তুলতে পেরেছিল। রাইন নদীর বিভিন্ন অংশে ‘হাঙ্গার স্টোনের’ পুনরাবির্ভাব জার্মানির অনেকের মধ্যে আগের খরাগুলোর স্মৃতিও নিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জার্মানির সবচেয়ে বড় এ নদীর তীরজুড়ে এ ধরনের অনেক পাথর দৃশ্যমান হচ্ছে। পাথরগুলোতে থাকা তারিখ ও নাম অতীতের খরাগুলোতে মানুষের দুর্দশার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অনেকে একে সতর্কবার্তা হিসেবেও দেখছেন। ফ্রাঙ্কফুর্টের দক্ষিণে ওর্মস এবং লেভারকুসেনের কাছে রাইনডর্ফে পাওয়া পাথরগুলোতে ১৯৪৭, ১৯৫৯, ২০০৩ ও ২০১৮ সালের তারিখ দেখা যাচ্ছে।

খরার কারণে ইউরোপের আরেকটি বড় নদী দানিয়ুবের পানির স্তর প্রায় এক শতকের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় পৌঁছার পর সার্বিয়ার নদীবন্দর নগরী প্রাহোবোর কাছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডুবে যাওয়া ২০টিরও বেশি ভাঙাচোরা যুদ্ধজাহাজের খোলনলচে দৃশ্যমান হয়েছে। ধাবমান সোভিয়েত বাহিনীর তাড়া খেয়ে ১৯৪৪ সালে নাৎসি জার্মানির কৃষ্ণসাগরীয় নৌবহরের যে শতাধিক নৌযান দানিয়ুব নদীতে মুখথুবড়ে পড়েছিল, তার মধ্যে ছিল এসব যুদ্ধজাহাজ। পানির স্তর কমে যাওয়ায় এখনো এসব ভাঙাচোরা জাহাজ নৌ-চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। ইতালি তাদের পো নদীর আশপাশের এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে। জুলাইয়ের শেষদিকে তারা দেশের সর্ববৃহৎ নদীটির হ্রাস পাওয়া পানিতে আধা নিমজ্জিত অবস্থায় সাড়ে ৪০০ কেজি ওজনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন একটি বোমা পেয়েছিল। এরপর তারা চলতি মাসের শুরুর দিকে মানতুয়া শহরের নিকটবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় গ্রাম বোর্গো ভারগিলোর কাছে বসবাসরত প্রায় ৩ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে সামরিক বাহিনীর বিশেষজ্ঞদের দিয়ে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোমাটি নিষ্ক্রিয় করে।

 

সর্বশেষ খবর