ইরানের সংসদ জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা আপাতত বন্ধ করার একটি প্রস্তাব পাস করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম নুরনিউজ এ খবর দিয়েছে। নতুন এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখন থেকে আইএইএর পরিদর্শকরা ইরানে ঢুকতে পারবেন কেবলমাত্র তখনই, যদি দেশটির সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ তাদের অনুমতি দেয় এবং সংস্থাটি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
মেহের সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, সংসদের মোট ২২১ জন সদস্য এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। কেউ বিরোধিতা করেনি এবং মাত্র একজন সদস্য ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। এ বিল অনুযায়ী, যদি পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, তাহলে আইএইএর পরিদর্শকদের ইরানে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। সংসদ কেবল তাদের কাছে এ প্রস্তাব দিয়েছে। তারা চাইলে এটি কার্যকর করবে। এ ছাড়া ইরান সরকার ড্রোন ব্যবহারে আরও কঠোর বিধিনিষেধ আনার জন্য নতুন একটি আইনও পর্যালোচনা শুরু করেছে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর সমালোচনা করে বলেছেন, এ চুক্তি ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরও জানান, তেহরান এনপিটির সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে।
সম্প্রতি ইসরায়েল-মার্কিন আগ্রাসনের পর এক কূটনৈতিক সফরের শেষে আল-আরাবি আল-জাদিদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাগচি বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) মেনে চলার চেষ্টা করেছে কিন্তু এ চুক্তি ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে ২০ বছরের স্বচ্ছতা ও আস্থা তৈরির প্রচেষ্টা ইতিবাচক ফল দেয়নি। তাই এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্র পারমাণবিক কর্মসূচি ও এনপিটি সহযোগিতার বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। আরাগচি আরও বলেন, ইরানিরা শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রযুক্তি অর্জনের জন্য উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে, এমনকি কিছু বিজ্ঞানী এ লক্ষ্য অর্জনে প্রাণও দিয়েছেন; তাই কেউ এ প্রযুক্তি অর্জন থেকে তাদের থামাতে পারবে না। ইসরায়েল-মার্কিন আগ্রাসন এবং তেহরানের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকা ইসরায়েলের ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে, কারণ তারা ভেবেছিল ইরান চাপের মুখে নতিস্বীকার করবে। তবে, তৃতীয় প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার পর শত্রুরা পিছু হটে এবং যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়। -বিবিসি
আরাগচি আরও বলেন, মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটিতে ইরানের কৌশলগত হামলা ছিল আত্মরক্ষামূলক কাজ এবং এটিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে দেখা উচিত নয়। তিনি উল্লেখ করেন যে কাতারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং সামাজিক যোগাযোগের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। রাশিয়ার অবস্থান সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, মস্কো ইসরায়েল-মার্কিন আগ্রাসনের নিন্দা করে একটি শক্তিশালী এবং স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইরান পারমাণবিক ইস্যুতে রাশিয়া একটি প্রভাবশালী পক্ষ এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করে, যার মধ্যে বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রও রয়েছে।