ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের বিষয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, সেটিকে খুব বেশি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না ক্রেমলিন। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ অবসানের ব্যাপারে আলোচনা করতে আবারও দুই নেতাকে আহ্বান জানিয়েছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে বৈঠকের প্রচেষ্টার বিষয়টি সামনে আসে এমন এক সময়ে যখন গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে এবং সোমবার হোয়াইট হাউসে সাতজন ইউরোপীয় নেতা ও জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঠিক তখন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন এই ‘সংঘাত’ এর সমাধান করা ‘কঠিন একটি কাজ’। তিনি এটিও স্বীকার করেছেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সম্ভবত সংঘাতের ইতি টানতে আগ্রহী নন। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন যে, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমরা হয়তো জানতে পারব পুতিন কেন চুক্তি করতে রাজি নন।’ ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘যদি সেটাই হয় তাহলে পুতিন এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বেন’। তবে এর বাইরে আর কিছু বলতে চাননি তিনি। কিন্তু পরের দিনই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের একটি অস্পষ্ট বক্তব্য ওই আলোচনার প্রস্তাবে পানি ঢেলে দেয়। কেননা, তিনি বলেছিলেন, ‘যে কোনো বৈঠকের প্রস্তুতি ধীরে ধীরে এবং বিশেষজ্ঞ স্তর থেকে শুরু করে এবং তারপরে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’ রাশিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের উপপ্রতিনিধি দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেছেন, ‘সরাসরি আলোচনার সুযোগকে কেউই নাকচ করেনি। তবে শুধু নামমাত্র বৈঠক করার কোনো মানে হয় না।’ মঙ্গলবার খবরে বলা হয়, পুতিন ট্রাম্পকে প্রস্তাব দিয়েছেন যে জেলেনস্কি আলোচনার জন্য মস্কো যেতে পারেন। কিন্তু এটি ইউক্রেন কখনোই মেনে নেবে না। এটি সম্ভবত রাশিয়ার এমন একটি প্রস্তাব ছিল, যা এতটাই অবাস্তব যে কিয়েভ এতে স্বাভাবিকভাবেই রাজি হতে চাইবে না। গত কয়েক দিনের আলোচনা দেখে মনে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধের জটিলতা- মস্কোর দাবি আর কিয়েভের অবস্থানগত পার্থক্যের মধ্যে যে তীব্র ফারাক রয়েছে সেটি নতুনভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। পুতিনকে রাজি করাতে পারবেন বলে তিনি যে বহুল আলোচিত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন তা কিন্তু বাস্তবে হয়নি।-বিবিসি
এখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সরাসরি একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তিতে যাওয়া উচিত। তবে সম্প্রতি বৈঠকে শুধু ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পকে বোঝাতে পেরেছেন যে শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে কিয়েভের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে ইউরোপীয়রা যদি ইউক্রেনে স্থলভাগে সেনা সরবরাহ করে তবে আমেরিকা ‘আকাশপথে’ তাদের সাহায্য করতে রাজি আছেন। যদিও তিনি মার্কিন সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি বিস্তারিতভাবে বলেননি যে, এই আকাশ সহায়তা মানে কেবল গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় নাকি যুদ্ধবিমান মোতায়েনের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি অস্পষ্ট থাকলেও, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের ‘নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনে শান্তি নিশ্চিত করতে একটি বাহিনী গঠন করতে চায়। যুদ্ধ শেষ হলে বাহিনীটিকে ইউক্রেনে পাঠানো যেতে পারে। মঙ্গলবার এ গ্রুপের একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা আগামী দিনগুলোতে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক ও শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার পরিকল্পনায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। -বিবিসি