৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০৮:২৬

ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ জাকাত

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ জাকাত

ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি জাকাত। ইসলামী অর্থনৈতকি ব্যবস্থার স্তম্ভ হিসেবে ভাবা হয় জাকাতকে। ইসলামে প্রতিটি অবস্থাপন্ন মুমিনের জন্য জাকাত আদায় অবশ্যকর্তব্য বা ফরজ বলে বিবেচিত। জাকাত আদায় যাদের জন্য ফরজ তারা তা আদায় না করলে পরকালে তাদের কঠিন সাজার সম্মুখীন হতে হবে। আল কোরআনে সালাত বা নামাজ আদায়ের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জাকাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে। 

অবস্থাপন্ন মুমিনদের জন্য জাকাত আদায় যে বাধ্যতামূলক তা বোঝাতে জাকাতের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী বিধান অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ বা সঞ্চয় থাকলে জাকাত আদায় বাধ্যতামূলক। সাধারণত দরিদ্র আত্মীয়স্বজন, দুস্থজন জাকাতের প্রধান দাবিদার। আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনে জাকাতের প্রাপক হিসেবে আরেক বিশেষ শ্রেণির দাবিদারের কথা বলেছেন।

সুরা বাকারার ৭৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এটা প্রাপ্য অভাবগ্রস্ত লোকদের, যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে দেশময় ঘোরাফেরা করতে পারে না; যাচ্ঞা না করার জন্য অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত বলে মনে করে, তুমি তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে যাচ্ঞা করে না। যে ধনসম্পদ তোমরা ব্যয় কর আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।’ অনেক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি বা পরিবার আছে যারা সামাজিক মান-মর্যাদার কারণে সাহায্যপ্রার্থী হতে পারে না কিংবা তারা সাহায্য চাইতে সংকোচে ভোগে, অথচ তাদের দেখলে বোঝা যায় তারা দৈন্যদশায় আছে এবং তাদের সাহায্যের প্রয়োজন। জাকাত আদায়ের সময় তাদের প্রতি নজর দেওয়া উচিত।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কৃপণ ও দান-খয়রাতকারী দুই ব্যক্তি এমন দুই ব্যক্তির সঙ্গে তুলনীয় যাদের পরিধানে রয়েছে লৌহবর্ম। তাদের উভয়ের হাত বুক ও কণ্ঠনালির মাঝখানে আটকে আছে। দান-খয়রাতকারী ব্যক্তি যখনই দান-খয়রাত করে তখনই তার লৌহবর্ম প্রশস্ত হয়ে যায়। আর কৃপণ যখনই দান-খয়রাতের ইচ্ছা করে তখনই তার লৌহবর্ম আরও সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং এর প্রতিটি বৃত্ত স্ব-স্ব স্থানে অনড় হয়ে থাকে।’ মুসলিম।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কোনো সম্পদের সঙ্গে জাকাতের সম্পদ মিশ্রিত হলে তা ওই সম্পদকে ধ্বংস করে দেয়।’ মুসনাদে ইমাম শাফিই, বুখারির তারিখ, আহমাদের মুসনাদ ও বায়হাকির শুআবুল ইমান থেকে মিশকাতে।

হাদিসের ভাষ্যকাররা জাকাতের সম্পদের ‘সংমিশ্রণ’-এর দ্বিবিধ অর্থ করেছেন ১. যে সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে তা থেকে জাকাতের অংশ যদি পৃথক না করা হয় তবে গোটা সম্পদই দুর্বিপাক, অমঙ্গল ও বরকতহীনতার শিকারে পরিণত হয়। নৈতিক ও শরিয়তি দৃষ্টিকোণ থেকে তা কোনো মুসলমানের ব্যবহার-উপযোগী থাকে না, যেন তা ধ্বংস ও লয়প্রাপ্ত হয়ে গেছে।

২. কোনো ব্যক্তি সচ্ছল ও জাকাত পাওয়ার অনুপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও যদি লোকদের থেকে জাকাত ও দান-খয়রাত গ্রহণ করে এবং তা নিজের বৈধ ও হালাল পন্থায় উপার্জিত সম্পদের সঙ্গে যুক্ত করে তবে সে এভাবে তার গোটা সম্পদকেই নাপাক ও অপবিত্র সম্পদে পরিণত করে। শুধু জাকাত আদায় নয়, মুমিনদের উচিত তাদের গরিব ভাইদের প্রতি তাদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য না করা।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর